ঢাকা: ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশ শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে এটিকে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ আখ্যা দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সপ্তাহজুড়ে।
সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে এতে উপস্থিত থাকবেন বিধায় এবার সমাবেশে শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
ইতোমধ্যে সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ারর্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যানের চারদিকে বসেছে নিরাপত্তা বেষ্টনী। রমনা কালি মন্দিরের গেট ছাড়া সব প্রবেশপথ বন্ধ রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমাবেশস্থল প্রস্তুতের জন্য মাঠকর্মীরা পরিশ্রম করছেন। যেসব স্থানে পানি জমে আছে, সেসব স্থান বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এ ছাড়া সমাবেশস্থলের সামনের অংশজুড়ে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। এক ভাগ থেকে অন্য ভাগে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তল্লাশি (আর্চওয়ে গেট) বসানো হয়েছে।
উদ্যানের পূর্ব অংশে রাখা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। এ ছাড়া মঞ্চকে নৌকার আদলে শোকের আবহে সাজানো হয়েছে। ১৫ আগস্ট শহীদের ছবিযুক্ত ব্যানার স্থাপন করা হয়েছে।
বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের সিনিয়র নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, আগামীকালের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশ থেকে রাজধানী ঢাকায় যে তারুণ্যের ঢল নামতে শুরু করেছে তাতে আমাদের বিশ্বাস, এটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশে পরিণত হবে। এটিকে আমরা তারুণ্যের অভিযাত্রা বলতে পারি। দেশের বৈধ এবং নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে তার বিরুদ্ধেই মূলত এই ছাত্রসমাবেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্রলীগ তথা শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন।
নেতাকর্মীদের ১০ নির্দেশনা
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান নেতাকর্মীদের ১০টি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো- সর্বাবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। যেকোনো বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি অথবা ইউনিটের প্রতি তাৎক্ষণিক, চূড়ান্ত ও স্থায়ী সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমাবেশে প্রবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। সমাবেশস্থলে কোনোভাবেই ব্যানার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। স্বেচ্ছাসেবকদের সরবরাহকৃত উপকরণ ব্যতীত পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করা যাবে না।
নির্ধারিত সময়ে গেট খুললে দ্রুততম সময়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রবেশ করতে হবে। সমাবেশস্থলে একাধিকবার প্রবেশ ও বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শারীরিক যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে মেডিকেল ক্যাম্পে যোগাযোগ করতে হবে। সমাবেশস্থল ও এর আশপাশে এলাকার পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে সতর্ক থাকতে হবে। জনদুর্ভোগ পরিহার করতে হবে এবং অযথা যানজট সৃষ্টি না করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
ঢাবির নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস
ছাত্র সমাবেশকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অন্য সময়ের কর্মসূচির চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। হলের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ সভার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বের করা হচ্ছে মিছিল।
শুক্রবারের রুটম্যাপ
সমাবেশকে ঘিরে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে ইতোমধ্যে ডিএমপির রমনা বিভাগ একটি নির্দেশনা দিয়েছে। অপরদিকে ছাত্রলীগও প্রতিটি ইউনিটকে কোথায় পার্কিং করবে, কোন সড়ক দিয়ে আসবে তা ঠিক করে দিয়েছে।
সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের জন্য রোড ম্যাপ ঘোষণা
শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার থেকে জগন্নাথ হল ক্রসিং ও টিএসসি থেকে স্মৃতি চিরন্তন (ভিসির বাসভবন) অভিমুখী সড়কে কোনো গাড়ি প্রবেশ করবে না।
চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আসা নেতাকর্মীরা তাদের গাড়ি স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য ক্রসিং থেকে পলাশী ক্রসিংয়ের দুই পাশে পার্কিং করবেন।
সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগ ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা গাড়ি পার্কিং করবেন বাবে রহমত, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফকিরাপুল ও নটরডেম কলেজ এলাকায়।
বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ থেকে আসা নেতাকর্মীরা দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকায় তাদের গাড়ি পার্ক করবেন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীরা নীলক্ষেত ক্রসিং থেকে পলাশী ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে গাড়ি পার্কিং করবেন।
আর ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহ তাদের সুবিধানুযায়ী উপর্যুক্ত রুটসমূহ অনুসরণ করে নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের গাড়ি পার্কিং করবেন।
সমাবেশ নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, এই সমাবেশ হবে একটি সুসংহত, সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ একটি ছাত্র সমাবেশ। এই সমাবেশের একটিই লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার লড়াই-সংগ্রামকে বিজয়ী করা। এ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনবদ্য ডিসপ্লে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা নিশ্চিত করব।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সারা বাংলাদেশে যে ঐক্যের সুর উঠেছে, জয়ের প্রতিধ্বনি প্রতিফলিত হচ্ছে তার জন্য আমরা সত্যিই আনন্দিত। আমাদের এই সমাবেশে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
তিনি বলেন, যদি কেউ সুশৃঙ্খল ছাত্র সমাবেশে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা তৈরি করে বা করার চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ সাংগঠনিক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে এই বার্তা দিতে চাই যে, সারা বাংলাদেশের ছাত্র, তরুণ সমাজ শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপসহীন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা আগস্ট ৩১, ২০২৩
এসকেবি/আরএইচ