সাভার (ঢাকা): এ সরকার ভোট চোর। এ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকার আর সুযোগ আমরা দিতে পারি না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
তিনি বলেন, বিএনপি লড়াই করছে জণগণের মৌলিক অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আর সেই লক্ষে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে বিএনপি লড়াই করছে। গত ১ বছরে বিএনপির ২২ জনকে হত্যা করেছে তারা। আজকে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি এখন থেকে জনগণ যা বলবে সরকারকে সেটিই মানতে হবে। আমরা জানি আমরা সঠিক পথে আছি৷ এ সরকার ভোট চোর। এ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকার আর সুযোগ আমরা দিতে পারি না, আপনারও দেবেন না।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরকার পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে রাজধানীর আমিনবাজারের মিরপুর মফিদ ই আম কলেজ নতুন ভবনের মাঠে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে আমেরিকার বাংলাদেশে ভিসা নীতি প্রদান করেছে যা আমাদের বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। আমাদের ব্যাংক লুট করে, আমাদের শেয়ার বাজার লুট করে, আমাদের জনগণের পেটে লাথি মেরে জনগণকে অর্থ কষ্টে রেখে, জনগণের পকেট খালি করে এ সরকার তার সুবিধাভোগী সরকারদলীয় ব্যবসায়ীদের দিয়ে পাচার করছে। আর বিদেশে বাগান বাড়ি কিনছে। কেউ বেগম পাড়ায় কিনছে, কেউ যুক্তরাষ্ট্রের কিনছে, কেউ যুক্তরাজ্যে কিনছে ও কেউ বা দুবাইতে বিনিয়োগ করছে।
সেলিমা রহমান বলেন, আজকের এ জনসভায় যেদিকেই তাকাই লোকে লোকারণ্য। জনগণ নিয়ে একত্র হয়েছি। বাংলাদেশর গণতন্ত্রকামী যত শক্তি আছে সবাই আজ একত্র হয়েছে, একটি মাত্র লক্ষ্যে। সেই লক্ষ্য হলো এ সরকারকে পদত্যাগ করানো৷ আমরা জানি একটি ফ্যসিস্ট সরকার। যিনি আজ অবৈধভাবে জোড় করে রাষ্ট্র চালাচ্ছে। তিনি কুটুনীতি থেকে শুরু করে দুঃশাসন চালাচ্ছে।
দেশের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে আমরা দেখি সাধারণ মানুষ অসহায়। একটি মা তার সন্তানকে একটি ডিম খেতে দিতে পারে না৷ তরকারি খেতে দিতে পারে না। কারণ সমস্ত জিনিস অগ্নিমূল্য হয়ে গেছে। কোনো জিনিস কেনার ক্ষমতা কারো নেই। বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ের কারণে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ যুবকেরা কর্মসন্থান না পাওয়ার কারণে বেকার হয়ে পড়ছে। ছাত্র-ছেলেরা, যুবক ছেলেরা আজ রিকশা চালাচ্ছে। আরও দেখছি মিথ্যা মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালতে ঘুরছে৷ কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে, কাউকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে ও কাউকে গুম-খুন-হত্যা করে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এটি করছে এ অবৈধ সরকার৷ জোর করে আবারও চেষ্টা করছে চক্রান্ত করে বিনা ভোটে নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতায় থাকার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আর এটি হতে দেবে না৷
সরকারের জবাবদিহিতার বিষয়ে তিনি বলেন, আজকে আমাদের মা-বোনরা শান্তিতে নেই। যখন কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হয় এ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেই না। কিন্তু মুখে মুখে বলে নারীদের ক্ষমতায়ন করেছি আদৌতে কোনো ক্ষমতায়ন করেনি৷ ক্ষমতায়ন করেছে নিজেদেরকে ক্ষমতায়ন করেছেন নিজের দলের লোকদেরকে। আজ গুম-খুনের শিকার পরিবারের শিশু সন্তানেরা বাবাকে ফিরে পেতে চাই কিন্তু পায় না৷ যেখানে আমাদের রিজার্ভ শূন্য হয়ে গেছে, যেখানে ডলার সংকট সে সময়ে তিনি তার দলবল নিয়ে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ এ সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর এগুলো কারা করে? এগুলো করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন। দেশে আজ কোনো বিচার নেই৷ এ দেশের বিচারবিভাগ আজ এক দলীয় হয়ে গেছে। সবাই আজকে বাকশালী কায়দায় চলছে৷ সরকার যা বলে সেভাবেই চলছে৷ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাকে আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন, কিন্তু তারা তাকে পাঠাতে দিচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আল্টিমেটাম দিয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমরা অবশ্যই মুক্তি দিয়ে যেভাবেই হোক আমরা বিদেশে পাঠাব। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায় করবো।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবার ও কল্যাণ বিষয়ক সহ সম্পাদক ও ঢাকা ১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা ও বিএনপির ঢাকা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমিসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩
এসএফ/জেএইচ