নারায়ণগঞ্জ: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তি দাবিতে দলের কেন্দ্র ঘোষিত অনশন কর্মসূচিতে দায়সারাভাবে অংশগ্রহণ করেছেন জেলা বিএনপির নেতারা। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে কর্মসূচি চলাকালেই তীব্র ক্ষোভ ঝেড়েছেন কর্মীরা।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় প্রেসক্লাবের পাশের গলিতে কর্মসূচি পালনের নির্ধারিত সময় থাকলেও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এতে হাজির হন দুপুর ১২টায়। অথচ মহানগর বিএনপির নেতারা সকাল ১০টা থেকেই অনশন কর্মসূচি পালন করতে হাজির ছিলেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন দায় পৌনে ১টা পর্যন্ত চলা কর্মসূচিতে দুপুর ১২টায় হাজির হলেও উপস্থিন হননি সভাপতি গিয়াস উদ্দিন। শুধু জেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নয়, জেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে একই অবস্থা।
গোলাম ফারুক খোকনকে গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে মোবাইল ফোনে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। তারা জানান, কর্মসূচিতে হুট করে হাজির হন তিনি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। এমনকি তিনি কর্মসূচির ব্যাপারে কোনো কেন্দ্রীয় নেতা, জেলার নেতা, ইউনিটের নেতাদের কিংবা অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাদের ফোনে অবহিতও করেন না। একই অভিযোগ সভাপতির ক্ষেত্রেও।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফাতেহ মো. রেজা রিপন। এ সময় মিছিলসহ মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। তবে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক রাইদ ইশতিয়াক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাখাওয়াত ইসলাম রানাসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা কর্মসূচিতে আসেননি।
জেলা বিএনপির ফাঁকি দেওয়া ছিল একেবারে চোখে পড়ার মতো। দুপুর ১২টার আগে জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতাকে দেখা যায়নি কর্মসূচিতে। দুপুর ১২টায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের সঙ্গে কর্মসূচিতে আসেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান ভুঁইয়া। এর কিছুক্ষণ আগে আসে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, সদস্য সচিব সালাহউদ্দিন সালু উপস্থিত হন।
কর্মসূচিতে একেবারে ফাঁকি দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের জিকু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীবসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাকর্মীরা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে বিভিন্ন পদে প্রভাবশালী নেতারা ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও এদিন আসেননি কর্মসূচিতে। তবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান ১২টার কিছু সময় পরে হাজির হন।
দলের চেয়ারপারসন মৃত্যুশয্যায় থাকলেও দলের দায়িত্বশীল নেতাদের এমন আচরণে কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নেতাকর্মীরা জানান, এ সময়ে যখন রাজপথে আন্দোলনে জেলা বিএনপির উত্তাল ভূমিকা রাখার কথা তখন নেতাদের এমন গাঁছাড়া ভাবই বলে দিচ্ছে আগামীতে রাজপথের জোরালো কর্মসূচিতে আবারো ব্যর্থ হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, এই কর্মসূচি দিয়ে কাজ হবে না। শেখ হাসিনার বিদায়ের মাধ্যমে আমাদের নেত্রী মুক্ত হবেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া আমাদের আর কোনো দাবি নেই। সরকারের পতনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়, তাই তাকে জেলে রেখে স্লো পয়জন দিয়ে অসুস্থ করেছে। আর এ জন্যই তার সুচিকিৎসা হোক এটি তারা চায় না। ১৮ তারিখের মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের আল্টিমেটাম দেওয়া হবে। দাবি না মানলে তাদের নামিয়ে এবার মানুষ জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমাদের প্রয়োজন হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি। এ মাসের মধ্যে ঘোষণা আসবে, প্রস্তুতি নিন। চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই, আসুন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে দেখি কার জনপ্রিয়তা কত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২৩
এমআরপি/এমজেএফ