কুমিল্লা: কুমিল্লায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত (৪২) নামে এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ইলিয়াসের পরিবারের দাবি, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত লন্ডনের ম্যানচেস্টার শহরের বাসিন্দা। তিনি জন্মসূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক। তার বাবা কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার মনোহরপুর এলাকার মো. আব্দুল মুকিত ১৯৬৫ সালে লন্ডনে চলে যান। পরে স্ত্রীকেও নিয়ে যান তিনি। সেখানেই ইলিয়াসসহ তাদের তিন ছেলের জন্ম হয়।
জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা হরতালের দিন কুমিল্লার চকবাজারে বিএনপি নেতাদের মিছিলে ধাওয়া দেয় পুলিশ। এতে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাদের নামের সঙ্গে ব্রিটিশ বাংলাদেশি ইলিয়াসের নামও যুক্ত করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার সর্বশেষ ৩০ নম্বর আসামি মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত। কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জীবন কৃষ্ণ মজুমদার বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলার নথিতে স্বাক্ষর করেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সনজুর মোরশেদ।
মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিতের শ্যালক আবদুল গফফার ওবায়েদ বলেন, আমরা সম্পর্কে খালাতো ভাইও। উনি জন্মসূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক। করোনার আগে বাংলাদেশে এসে খালাতো বোনকে (আবদুল গফফার ওবায়েদের বোন) বিয়ে করেছেন। দেশে থেকে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র রেডি করছিলেন। তাই ওনার যেতে দেরি হচ্ছে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত ওনার ভিসার মেয়াদ আছে। কিছুদিন পরই চলে যাওয়ার কথা আপাকে নিয়ে। ইলিয়াস ভাই ঠিক মতো বাংলায় কথাও বলতে পারেন না। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। ঘটনার দিন তিনি বাসায় ছিলেন। আর নিজের চুল কাটার দরকার হলেও নাপিতও বাসায় নিয়ে আসেন তিনি। কোনো দিন শপিং করতেও যান না। কখনও বাইরে গেলে কাউকে সঙ্গে যেতে হয়। অথচ ওনাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবার থানায় যোগাযোগ করেছে। পুলিশ নাকি দুঃখ প্রকাশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, এক স্বজনের সঙ্গে জমির ভাগ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে তাকে আসামি করা হতে পারে।
ইলিয়াস বর্তমানে কুমিল্লায় অনলাইনে বিভিন্ন দেশের ব্যারিস্টারদের ক্লাস নেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী এসআই জীবন কৃষ্ণ মজুমদার বলেন, অনেক সিনিয়র অফিসারের উপস্থিতিতে মামলাটি করা হয়েছে। আমি তো ক্ষুদ্র একজন অফিসার। ইলিয়াস ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাই নাম লেখা হয়েছে। উনি কোর্টে জবাব দেবেন যে উনি ব্রিটিশ নাগরিক।
মামলার ৭ নম্বর আসামি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ৩০ নম্বর আসামি মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিত বিএনপির কেউ নন, আমরা তাকে চিনি না।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইলিয়াস মুকিতের আইনজীবী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ২৯ অক্টোবরের ঘটনার পরদিন আমার মক্কেল ইলিয়াসকে পুলিশ তার বর্তমান বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে কোনো হামলার প্রমাণ বা ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এমনকি ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। পুলিশ মামলা দেওয়ার পর তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ড চাওয়া হলেও তার রিমান্ড চাওয়া হয়নি, হয় তো আসামি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে। আমরা বিচারকের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদন করেছি এবং সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। এদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে আমার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। এ বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তাদের নাগরিকের যত সহযোগিতা দরকার, তারা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আহমেদ সনজুর মোরশেদ বলেন, কে বলছে উনি ব্রিটিশ নাগরিক? উনি তো দেশেই থাকেন, দেশেই শিক্ষকতা করেন। আপনি যেহেতু জানছেন, আমাকে এটা জেনে বলতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২৩
এসআই