লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর আবদুল্লাহর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম (২০) হত্যা মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম সাত আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের একটি দস্যু বাহিনীর প্রধান মো. আল মামুন খোকন ওরফে খোকন ডাকাত (৪১), তার বাহিনীর সদস্য শেখ ফরিদ ওরফে ফরিদ ডাকাত (৫০), মুরাদ ওরফে মুরাদ ডাকাত (৪১), রিয়াজ ওরফে রিয়াজ ডাকাত (৩৪), সুমন (৩৬), আরজু ওরফে আরজু ডাকাত (৩১) ও জসিম (৪৬)। এরা সবাই রামগতির বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন ও আশপাশের বিভিন্ন দুর্গম চরে বসবাস করেন।
জানা গেছে, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ ও নদীর জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিপক্ষ বাহিনীর সদস্যদের হাতে ২০১৭ সালের ২১ জুন খুন হন ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম। এ ঘটনায় পর ২৫ জুন তার বড় ভাই আবু ছায়েদ বাদী হয়ে চরের একটি দস্যু বাহিনীর প্রধান মো. আল মামুন খোকন ওরফে খোকন ডাকাতকে প্রধান করে তার আরও তিন ভাই জমির, ফখরুল ও আজিমসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের নামে রামগতি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নদীতে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলার প্রধান আসামি ডাকাত খোকন ও তার ভাইদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলামের বিরোধ ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ৪-৫ মাস আগে খোকন বাহিনীর সদস্যরা নজরুলকে মারধর করে। এ নিয়ে খোকন ও তার বাহিনীর সদস্যদের নামে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রামগতি) আদালতে মামলা দায়ের করেন নজরুল।
২০১৭ সালের ২১ জুন সকাল ১১ টার দিকে নজরুল ও তার ভাই শেখ ফরিদকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বয়ার খাল পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নজরুলকে পিটিয়ে ও ধারাল ছুরিকাঘাতে জখম করেন খোকন ও তার বাহিনীর সদস্যরা। আর শেখ ফরিদের ডান পা ভেঙে দেওয়া হয়। তাদের দু’জনকে উদ্ধার করে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ২৫ জুন সকালে নজরুলের মৃত্যু হয়।
হত্যা মামলাটি একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়ের তখনকার পরিদর্শক তৌহিদুল আনোয়ার ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। এতে খোকনকে প্রধান করে তার বাহিনীর আরও ৬ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর আবদুল্লায় লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, ভোলা ও বরিশালের নদী ভাঙা লোকজন বসবাস করেন। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় চর আবদুল্লাহর ভূমির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চরে জমি। সেখানে খোকন ডাকাতের নেতৃত্বে দস্যু বাহিনীর সদস্যরা চরের জমি দখল ও জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন। ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলামও দস্যুতা ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। চরের আধিপত্য ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নজরুলের সঙ্গে খোকনের বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে উল্লিখিত আসামিরা নজরুলকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে জখম করে। এতে তার মৃত্যু হয়।
মামলার রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী আবু ছায়েদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, মামলার রায় হয়েছে, আমি নিজেও জানি না। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীরা খালাস পেয়েছেন! -বিষয়টি দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আমার ভাই ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। দল ক্ষমতায়, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার হলো না। অতীতে মামলা চলাকালীন আমি আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। আসামিরা প্রভাবশালী। তাদের ক্ষমতা আছে, টাকা আছে। তারা দলের লোকজনদের ম্যানেজ করে ফেলেছেন। আমি তদন্ত প্রতিবেদনে পর পর দুইবার অনাস্থা দিয়েছি। তিন বার মামলার চার্জশিট হয়েছে। ১৪ আসামির মধ্যে সাতজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি সাতজনেরও সাজা হলো না। ভাইকে হারিয়েছি। সন্ত্রাসীদের ভয়ে চরের বাড়িঘর চেয়ে দিয়ে অন্যত্র বসবাস করছি।
এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তার মৃত্যুর পর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে নৃশংস এ হত্যার ঘটনা নিয়ে আর আন্দোলন হয়নি। দলের নেতাদের পক্ষ থেকেও নজরুলের পরিবারকে সেভাবে সহায়তা করা হয়নি। আর যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারাও দলীয় ছত্রছায়ায় ছিলেন। দলের কেউ না কেউ নিজেদের স্বার্থে তাদের শেল্টার দিতেন।
** লক্ষ্মীপুরে হাতুড়ি পেটায় আহত ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
এসআরএস