লক্ষ্মীপুর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মুহাম্মাদ রাকিব হোসেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তৃণমূল নেতৃবৃন্দের অনুরোধে নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন৷
নির্বাচনী মাঠে প্রশাসনের পক্ষপাত, সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা ও কালো টাকার ছড়াছড়িরও অভিযোগ তোলেন তিনি।
এছাড়া সরকার দলীয় প্রার্থী সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোটের মাঠে প্রয়োগ করছেন বলেও মন্তব্য করেন রাকিব।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন তিনি।
শহরের ডিবি রোডস্থ নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পক্ষপাত করা হচ্ছে। সকালে পোস্টার লাগালে দুপুরে পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন কালো টাকার প্রভাবে লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্ট ও কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছেন। এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এসব কারণে ক্ষুব্ধ জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লাঙ্গল প্রতীকের রাকিব হোসেন।
তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় যেভাবে কালো টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে, আমি শঙ্কিত, লক্ষ্মীপুরে নির্বাচন করতে হলে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তা না হলে নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারবেন না। কালো টাকার এতো বেশি ছড়াছড়ি, কালো টাকার এতো বেশি প্রভাব- নির্বাচন কমিশন এগুলো খতিয়ে দেখছে কিনা!
কালো টাকার প্রভাবে আমি এজেন্ট দিতে পারি না, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আরও বেশি দিচ্ছে। ভোটের দিনের জন্য প্রতি কেন্দ্র খরচ দেওয়া হচ্ছে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে। নির্বাচনে আট থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ। ১২৫টা কেন্দ্রে ৮৪৮ এজেন্ট। প্রতিজনকে তিন-পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তাহলে এখানেই চার কোটি। পাঁচ-ছয় কোটি টাকা শুধু ভোটের দিনই ওনারা ব্যবহার করবেন।
তিনি বলেন, আমার সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল নেতৃবৃন্দ আমাকে অনুরোধ করেছে 'প্রহসনের নির্বাচনে' অংশ না নিতে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
গত ৫ নভেম্বর এ আসনে উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রাকিব বলেন, আমাদের সঙ্গে সরকার দলীয় যিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তিনি গত ৫ নভেম্বর উপনির্বাচনে যেভাবে হোক সংসদ সদস্য তকমা লাগিয়েছেন। কীভাবে লাগিয়েছেন- ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ সিলের সিস্টেমে। নির্বাচনে উনি এখন সরকারি সব সুবিধা নিচ্ছেন। সেগুলোই উনি ব্যবহার করছেন৷ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী (নৌকা) পুরোপুরি রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছেন।
মানুষ এ ধরনের নির্বাচনে আগ্রহী নয় জানিয়ে তিনি বলেন, যারা দাঙ্গা হাঙ্গামামুক্ত সমাজ চায়, তাদের অনেকের অনীহা নির্বাচনে। অনেকের কথা হচ্ছে- নির্বাচন তো প্রহসনের নির্বাচন, সিলেকশনের নির্বাচন। মানুষ নির্বাচনের প্রতি আগ্রহী না। সারা দেশের অবস্থা আমি জানি না। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে যা দেখেছি- লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের মানুষ নির্বাচন বিমুখ। মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধা গ্রহণকারীরাই নির্বাচনের মাঠ ধরে রেখেছে। নির্বাচনে ‘আমি, মামি, ডামি’ প্রার্থী অংশগ্রহণ করছে। ঘুরেফিরে যে লাউ, সে কদু।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক মহিউদ্দিন খোকন, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন এমরান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক নিজাম উদ্দিন খান, জেলা সদস্য মিনহাজুর রহমান বিন্তু, পৌর জাতীয় পার্টির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহ্ উদ্দিন খোকন।
জাপা নেতা মুহাম্মদ রাকিব হোসেন গত ৫ নভেম্বর উপনির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নৌকা প্রতীকের গোলাম ফারুক পিংকুর কাছে পরাজিত হন। ভোটের দিন দুপুর ২টার দিকে কারচুপির অভিযোগ এনে রাকিব এবং জাকের পার্টির প্রার্থী সামছুল ইসলাম খোকন ভোট বর্জন করেন৷ ওই নির্বাচনে এ দুজন জামানত হারিয়েছেন৷ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু এবারও নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ছয়জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৪
এসআই