বরিশাল: বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, নির্বাচনে খুনোখুনির পর্যায়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি-জামায়াত মাটিতে শুয়ে পড়ে গিয়ে বলেছে, আমরা পড়িনি।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের হলরুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
মেনন বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে আমি নির্বাচন করছি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, উজিরপুর-বানারীপাড়ার নির্বাচন উৎসবমুখর হয়েছে। উত্তেজনা কিছু নির্বাচনে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহে নেই। কিন্তু এমন কোনো উত্তেজনা হয়নি, যা খুনোখুনির পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার মতো ছিল। সব থেকে বড় কথা হলো, ভোটার টার্নআউট ন্যাশনাল অ্যাভারেজ যা, আমাদের এখানেও তা।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে অংশগ্রহণ করেছে। প্রশাসন বেশি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভোটারদেরকে নিরুৎসাহিত করেছে। যারা ভোট নিচ্ছিলেন তাদের অনেককে আমি প্রশ্ন করেছি, আপনারা লোকজনকে ভোট দিতে দিচ্ছেন না কেন? তারা উত্তরে বলেছে, ছবির সাথে ভোটারের চেহারা মিলছে না। ২০ বছর আগের ছবির সাথে এখনকার চেহারার মিল না-ই থাকতে পারে, কিন্তু সেটিও তারা খতিয়ে দেখেছেন।
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আরও বলেন, প্রকৃত অর্থে একটা সফল নির্বাচন আমরা অনুষ্ঠিত করতে পেরেছি। এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জ ফরম দি আউটসাইড, যেটা প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। আমি বহু আগে বলেছি তাদের (পশ্চিমাদের) ওই হস্তক্ষেপ কখনওই নির্বাচনকে অবাধ করার জন্য ছিল না, রেজিম চেঞ্জ করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। এখনও তাদের লক্ষ্য রেজিম চেঞ্জ। এ লক্ষ্য নিয়ে তারা এগিয়েছিল, কিন্তু দে ফেইল্ড। বাংলাদেশের মানুষ তাদের সঠিক জবাব দিয়েছে। আর ইন্টারনালি বিএনপি-জামায়াত মাটিতে শুয়ে পড়ে বলছে, আমরা মাটিতে পড়িনি। এটা তো হয় না, তারা অক্ষমের প্রলাপ করছে। তারা জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, বরিশাল শহরের চেহারা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করতে পারিনি এখনও। অন্য জেলাগুলোর মতো আমি চেষ্টা করেছিলাম বরিশালের সব এমপিদের একত্র করে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। আমি চেষ্টা করবো সিনিয়রসহ নতুন যারা এসেছেন তাদের সম্মিলিত করে বরিশালের উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণের। মন্ত্রী হওয়া বা না হওয়ার ওপরে কোনো কাজ নির্ভর করে না, নির্ভর করে উদ্যোগের ওপরে। বরিশালের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সংবেদনশীলতা রয়েছে। বরিশালকে সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের চেষ্টা আমরা করতে পারি। সাংবাদিকদের সহযোগিতা পেলে আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমি আমার উদ্যোগের আয়োজন করবো।
এ সময় তিনি বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। নিজ সংসদীয় এলাকায় উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে মেনন বলেন, দুটি পৌর শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার চেষ্টার পাশাপাশি বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ওপর এবং উজিরপুরের হাবিবপুরে ব্রিজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে করে এ অঞ্চলের সাথে আশপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের পাশাপাশি তরুণদের কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়ে শিল্পায়ন, পর্যটন ও কৃষি খাতের উন্নয়নের কথাও বলেন তিনি।
নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা যাতে আরও উপযুক্ত ও দক্ষ হয়ে কাজ করতে পারে সেজন্য বরিশাল প্রেসক্লাবকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান মেনন। তিনি বলেন, এ উদ্যোগ নেওয়া হবে যাতে স্থানীয় পত্রিকাগুলো সত্যিকারের আঞ্চলিকতার খ্যাতি লাভ করতে পারে।
এ সময় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলার সভাপতি নজরুল হক নিলু, সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসবক্লাবের সহ-সভাপতি কাজী আল মামুন, সিনিয়র সাংবাদিক নজরুল ইসলাম চুন্নু উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
এমএস/এমজে