নড়াইল: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলার মতো নড়াইলে চলে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। সব হামলাই হয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
নড়াইলে ক্রিকেটার ও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ দলটির ২৫ নেতাকর্মীর বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
কয়েকটি এলাকায় বাড়ি থেকে গরু লুট ও চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এদিকে দেশে হিন্দুদের ওপর হামলা হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় পাহারা দিয়ে হিন্দুদের বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা।
এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা রাত জেগে মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। হিন্দু অধ্যুষিত রূপগঞ্জ বাজারের হিন্দুদের সোনার দোকান খোলা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাহায্যে।
৫ আগস্ট সন্ধ্যায় নড়াইল-ঢাকা মহাসড়কের মাছিমদিয়ায় অবস্থিত নড়াইল শহরের পালকি কমিউনিটি সেন্টার অ্যান্ড গেস্ট হাউসে ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। খুলে নেয় এসিসহ মূল্যবান সব কিছু।
কমিউনিটি সেন্টারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ২১টি এসি, ৫০০ চেয়ার, ৫০০ টেবিল, ৩৩টি ফ্যান, গেস্ট হাউজের ১৫ রুমের খাট, ২৩টি ডেকচিসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল লুট হয়েছে।
এছাড়া নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে পোলট্রি ব্যবসায়ী বাটুল মজুমদারের বাড়িতে গিয়ে দুই লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকায় এর আগে সোমবার বিকেলে আন্দোলনকারীরা তার বাড়ি ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে ১০ আগস্ট রাতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মাদরাসা বাজারে বিক্রির সময় পালকি কমিউনিটি সেন্টারের ১৩টি বড় ডেকচি উদ্ধার করে মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১১ আগস্ট সারাদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালান বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আলেক হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক খন্দকার ফসিয়ার রহমান, ছাত্রদলের জেলা সভাপতি ফরিদ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার সানিসহ নেতৃবৃন্দ মালামাল উদ্ধারে মাঠে নামেন।
মাছিমদিয়া, উজিরপুর, ভওয়াখালীসহ নানা এলাকায় তারা মাল উদ্ধারের ঘোষণা দেন। ঘোষণায় বলা হয়, যার কাছে যে লুটের ও চোরাই মাল রয়েছে, তা নিজ দায়িত্বে নির্ধারিত স্থানে ফেরত দিতে হবে। এরপরই এলাকার ভিন্ন ভিন্ন বাড়ি থেকে কেউ সোফা, কেউ শত চেয়ার, কেউ ডেকচি, এসি ফেরত দেওয়া হয়। এরপর ১২ ও ১৩ আগস্ট ভাদুলিডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রিন্টার, চেয়ারও উদ্ধার করা হয়।
পালকি কমিউনিটি সেন্টার অ্যান্ড গেস্ট হাউসের মালিক সার ব্যবসায়ী অলোক কুন্ডু বাংলানিউজকে বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই আমার নতুন গড়া কমিউনিটি সেন্টারে শত শত মানুষ হামলা করে। লুট করে নিয়ে যায় এক কোটি টাকার মালামাল। বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলার পরে তারা মালামাল উদ্ধারে ব্যবস্থা নিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক লাখ টাকার মালামাল তারা উদ্ধার করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, অলোক কুণ্ডুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি নড়াইলে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরির নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্সের মাধ্যমে জেলার বেশিরভাগ সারের ডিলারশিপ তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক খন্দকার ফসিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কোনো লুটপাটই সমর্থন করার উপায় নেই। আমরা অলোক দাসহ অন্যদের লুটের মালামাল উদ্ধারে সচেষ্ট আছি। এটা কয়েকদিন ধরে চলবে। আমরা প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করে দিয়েছি।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, পালকি কমিউনিটি সেন্টার ও গেস্ট হাউসের লুটের মালামাল উদ্ধারে মাঠে নেমেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে লুট হওয়া কিছু মালামাল উদ্ধার করে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা জেলার প্রতিটি মন্দিরে পাহারা বসিয়েছি, হিন্দু পরিবারের ওপর যেন অত্যাচার ও তাদের বাড়িঘরে লুট-ভাঙচুর না হয়, সেজন্য আমাদের নেতাকর্মী সক্রিয় আছে।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশ সুপার মোহা. মেহেদী হাসান বলেন, সোমবার সকাল থেকে পুলিশের টহল শুরু হয়েছে, পুলিশ নিয়মিত কাজ করছে। লুটপাটসহ সব ঘটনায় মামলা হবে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
এসআই