ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

যুবলীগ কর্মীর অত্যাচার: ১০ বছর পর বাড়ি ফিরল প্রবাসী ২ পরিবার

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
যুবলীগ কর্মীর অত্যাচার: ১০ বছর পর বাড়ি ফিরল প্রবাসী ২ পরিবার

চাঁদপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নে প্রায় এক দশক পরে বাড়ি ফিরেছে দুই প্রবাসী পরিবার। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিজ বাড়ির যুবলীগ কর্মীর অত্যাচার আর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছিল এই দুই পরিবার।

তাদের অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দাপট দেখিয়ে যুবলীগের কর্মী জহির তাদের বাড়ি ছাড়া করে।

ইউনিয়নের সানকিসাইর গ্রামের মিজিবাড়ীতে ২০১৪ সালে এ ঘটনা ঘটে।  

নিরাপত্তাহীনতায় তখন প্রবাসীদের দুই স্ত্রী ও পাঁচ কন্যা সন্তান ঢাকা চলে যায়। সেখানেই তারা ভাড়া বাড়িতে ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় গত দুদিন আগে এই দুই পরিবারের সদস্যরা ঘরের তালা ভেঙে প্রবেশ করে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিজিবাড়ীর মো. আনোয়ার উল্লাহর ছেলে মো. নুরুল আমিন এবং আব্বাস মিজি প্রবাসে থাকতেন। তাদের দুই পরিবার ১০ কক্ষের একটি সেমি পাকা ঘরে বসবাস করতেন। পাশের ঘরই ছিল যুবলীগ কর্মী জহির মিজির। তবে তাদের দুপরিবারের মধ্যে সম্পত্তিগত বিরোধ ছিল। সেই থেকেই দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতি হয় এবং নুরুল আমিন এবং আব্বাস পরিবার ছিল বিএনপি সমর্থক।  

প্রবাসী আব্বাস মিজি বলেন, তারা প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে নানা অযুহাতে তার আপন চাচাতো ভাই জহির মিজি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের প্রতি অত্যাচার এবং নির্যাতন করেছে। এক সময় চাঁদাও দাবি করে। কোনো উপায় না পেয়ে উভয় পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কারণ জহির স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদের আত্মীয় এবং যুবলীগ কর্মী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিছুদিন আগে তিনি বিদেশে চলে গেছেন।

প্রবাসীদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, শাহিনুর বেগম ও তাদের মেয়ে আয়শা আক্তার মিম বলেন, আমরা ১০ বছর জহিরের অত্যাচারের শিকার হয়ে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছি। আমাদের মতো এমন অন্যায়ের শিকার যেন আর কোনো পরিবারকে না হতে হয়, সেই চাওয়া বর্তমান সরকারের কাছে।

তারা আরও বলেন, আমরা গত ১০ বছর বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে এলেও ঘরে প্রবেশ করতে পারিনি। কারণ আমাদের ঘরের বিভিন্ন স্থানে ১০-১২টি তালা দিয়েছে জহির। ঘরে একটি বিড়াল ছিল, আমরা ঘরে প্রবেশ করে ওই বিড়ালের কঙ্কাল পেয়েছি। জহির আমাদের পুকুরের মাছ লুট করেছে এবং অনেক মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। তার সঙ্গে আমাদের পরিবার বহুবার বসে সমাধানে আসার চেষ্টা করেছি ও বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি কিন্তু তারা সমাধানে আসেনি। থানা-পুলিশেও চেষ্টা করে কোনো সমাধানে আসতে পারেনি। কারণ তারা সরকারি দলের লোক।  

যুবলীগ কর্মী জহিরুল ইসলাম মিজির স্ত্রী মানসুরা বলেন, আমরা স্বামীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা সত্য নয়। আমাদের সঙ্গে তাদের সম্পত্তিগত হিসাব নিকাশ আছে। এসব বিষয়ে তাদের সঙ্গে বসতে বললেও তারা আসেনি। তারা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে মামলা দিয়েছে। গত সাত মাস আগে আমার স্বামী বিদেশে চলে গেছেন।  

যুবলীগ কর্মী জহিরের কারণে প্রবাসী এই পরিবারগুলোর বাড়ি ছাড়া হওয়ার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাদেকসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা।

অভিযোগের বিষয়ে বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এইচএম হারুনুর রশিদ বলেন, ওই জহির ভুক্তভোগী প্রবাসীর এই পরিবারটিকে অনেক হয়রানি করেছে। আমি নিজেও জহিরের হয়রানির শিকার হয়েছি। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।