ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

ধানের শীষ ফেলে নৌকায় উঠে বিপাকে মনিরুল

অতিথি করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
ধানের শীষ ফেলে নৌকায় উঠে বিপাকে মনিরুল

ঢাকা: বিরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মনিরুল হক; দলের রাজনীতিতে ছিলেন ব্যাপক সক্রিয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেদিন থেকে একচ্ছত্র আধিপত্য শুরু করলো, ভোল পাল্টান তিনি।

দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না ভেবে স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ক্ষমতাসীন নেতাদের সখ্য হন তিনি। ইউনিয়ন বিএনপির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ওঠেন নৌকায়। জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরব প্রচারণা চালান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দলটি উৎখাত হলে বিপাকে পড়েন মনিরুল। এখন ফেলে দেওয়া ধানের শীষ ফের হাতে নিতে ফুল নিয়ে ছুটোছুটি শুরু করেছেন বিএনপির সাবেক নেতাদের দরজায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধানের শীষ ফেলে নৌকা ওঠা বিরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মনির হোসেন এখন দলের নেতাদের ‘পামপট্টি মারছেন’। বিএনপিতে ভিড়তে তিনি মরিয়া। তার এমন ভোল পাল্টানো আচরণ দেখে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বেশ ক্ষুব্ধ। বিষয়টি নিয়ে তারা শরণাপন্ন হয়েছেন সিনিয়র নেতাকর্মীদের কাছে। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মনিরুলের তেলবাজীর ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ছিলেন মনিরুল। তার ব্যাপারে বিরুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, মনিরুল ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপির দুঃসময়ে দল ছেড়ে গেছে। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমর, মিরপুরের এমপি ও ঢাকা জেলার অসংখ্য নেতাকর্মীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতা আছে। ফেসবুকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে তার ফুলের মালা বিনিময়ের একান্ত ছবিসহ নানা কার্যক্রম তা প্রমাণ করে।

স্থানীয় ত্যাগী বিএনপি নেতারা জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই মনিরুল ফের বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করছে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন বাবু্র কাছে গিয়ে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছে। যা তৃণমূলের নির্যাতিত বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই মানতে পারছে না। এমন নীতি ভ্রষ্ট লোক সব দলের এবং সবার জন্যই বিপজ্জনক।

সাভার থানা বিএনপির সভাপতি সাইফ উদ্দিন সাইফুল বলেন, ২০২২ সালে ইউপি নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেন মনিরুল। শুধুমাত্র ইউপি সদস্য হতে ও স্বার্থ হাসিলের জন্য সাবেক এমপির কাছেই পদত্যাগপত্র জমা দেন। আমার কাছেও একটা কপি আছে। এরপর উপজেলা নির্বাচনে সাবেক সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই আওয়ামী লীগ তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল বলম সমররের সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে নির্বাচনী প্রচারণার অসংখ্য ছবি ও ভিডিও আমাদের নেতাকর্মীদের কাছে আছে। তবে এরপর সে আওয়ামী লীগের সদস্যপদ নিয়েছে কিনা জানি না। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই আবার নতুন করে বিএনপির দলে সে ভিড়তে চাচ্ছে। ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন বাবুর কাছে গিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছবিও তুলেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আমরা তো মাঠে থাকার মানুষ। কোনো মতেই এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। যারা বিএনপির দুঃসময়ে নিজেরাই পদত্যাগ করে গেছে। এখন আবার দলে ভেড়ার চেষ্টা করছে। এই বিষয় নিয়ে আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রেসিডেন্ট ও সেন্ট্রাল নেতৃবৃন্দকে বিষয়টা জানিয়েছি।

এ ব্যাপারে মনিরুল হক বলেন, আমি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করি নাই। আমাদের একটা ব্যর্থ কমিটি ছিল। সে কারণে সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু আমাদের কমিটিটা ভেঙে দেন। আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিইনি। আগে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনীতি হতো। এখন রাজনীতি হচ্ছে বিএনপি-বিএনপির মধ্যে। যারা এসব কথা বলছে, তারা আমার জনপ্রিয়তাকে হিংসা করে বলছে।

ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু বলেন, মনির আমাদের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তবে আমরা তাকে চিহ্নিত করে রেখেছি। আমাদের বিএনপির সাথে তিনি নেই আর থাকতে পারবেও না, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা রয়েছে। তিনি পরিচয় দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।