ঢাকা: নির্বাচনে তিনদিন ছুটিসহ ১৭টি সুপারিশ করেছে গণ অধিকার পরিষদ (নূর)।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে কাছে এমন সুপারিশ করেছে দলটি।
দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, আজ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু তাদের আজকে অফিসে এসে পাওয়া যায়নি। তাই আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে সুপারিশ জমা দিয়েছি।
গণঅধিকার পরিষদের সুপারিশগুলো হলো-
১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানে নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তকরণ। এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা গঠিত হবে।
২. জুলাই বিপ্লবে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্তকরণ।
৩. নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো। সেক্ষেত্রে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি আট বিভাগে আটজন নিয়োগ দান করা।
৪. নির্বাচন কমিশন গঠনের বর্তমান বিতর্কিত সার্চ কমিটির প্রক্রিয়া বাতিল করে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠনে আইন প্রণয়ন করা। সার্চ কমিটি কমিশনের সদস্য সংখ্যার দ্বিগুণ নাম চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমে প্রচার ও গণশুনানির মাধ্যমে নাম চূড়ান্ত করবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ওই নামগুলো থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশার ও অন্যান্য কমিশনাদের নিয়োগ প্রধান করবেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের সচিব নিয়োগ।
৫. দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষে ১০০ ও নিম্নকক্ষে আসন ৩০০ । নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে এবং উচ্চকক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের প্রাপ্তভোটে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন নির্ধারণ।
৬. সংরক্ষিত আসন বাতিল করে সকল আসনে সরাসরি নির্বাচন। স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী, মাফিয়াদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান যুক্তকরণ।
৭. ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করা। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদানসহ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিধান যুক্তকরণ।
৮. নির্বাচনে কোন প্রার্থী, ভোটার, সমর্থক, প্রার্থীর এজেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচন বিঘ্নিত হয় এমন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলায় জড়িত হলে ১০ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা। জেলা জজদের নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তিকরণ।
৯. রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার না করা। এবং ভোট গ্রহণের অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন পূর্বে সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছে প্রদান।
১০. প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা অন্যান্য কমিশনারদের নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা প্রমাণ হলে ১০ বছরের জেল এবং ১০ কোটি কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা।
১১. নির্বাচনের কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্নকরণে নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র ক্যাডার ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ। নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যাস্ত করা এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটে অনিয়ম, কারচুপি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শাস্তিপ্রাপ্ত কাউকে আদালতের অনুমতি ব্যতীত শাস্তি প্রত্যাহার না করা।
১২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সব কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করার পাশাপাশি এর নিরাপত্তা বিধানে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা প্রদান করা।
১৩. জাতীয় নির্বাচনের দিনসহ আগের আগের ও পরেরদিন মিলিয়ে নির্বাচনের সময় ছুটি তিনদিন করা।
১৪. নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রাপ্তিতে ন্যূনতম জেলা, উপজেলায় কার্যক্রম নেই এমন নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন করে রাজনীতিতে কালো টাকা, পেশীশক্তির হ্রাস ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে প্রকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ প্রদান। নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার ছাপিয়ে দেওয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করা।
১৫. স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করে নির্দলীয় রাখা। জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া বন্ধ করা এবং ৫০শতাংশের নিচে ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন দেয়া।
১৬. গুরুতর অনিয়ম,কেন্দ্র দখলসহ নৈরাজ্যকর অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন। একইভাবে যেকোন নির্বাচন বাতিল ও স্থগিত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের থাকবে।
১৭. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নির্বাচনকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্তর্ভুক্তকরণ। নির্বাচনী কর্মকর্তা বিশেষ আইন ১৯৯১ এ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চতকরণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
ইইউডি/জেএইচ