কুমিল্লা: আওয়ামী লীগ ও ভারতকে ইঙ্গিত করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আপনারা কাদের ভয় দেখাচ্ছেন? যারা এক হাত হারানোর পরও পঙ্গুত্ব বরণ করার পরও যুদ্ধে প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিল তাদের ভয় দেখাবেন না। শাহাদত যাদের প্রিয়, তাদের চোখ রাঙাবেন না।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) কুমিল্লা টাউনহল প্রাঙ্গণে আয়োজিত মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশে দুটি বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কম গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কুমিল্লা বিমানবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকগুলো জেলার কেন্দ্রস্থল কুমিল্লা। তাই বর্তমান সরকারকে বলব, কুমিল্লা বিমানবন্দরের দিকে নজর দিন।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কুমিল্লা নামে বিভাগ দেবেন না। কুমিল্লাকে অপমান করে কথা বলবেন। আপনি বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে শ্রদ্ধা করতে পারেননি। আপনি প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য ছিলেন না। বর্তমান সরকারকে বলব, নামের কারণে কুমিল্লাকে বিভাগ করা হয়নি। কুমিল্লাকে অপমান করা হয়েছে। অপমানিত কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করুন।
বাংলাদেশে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যতজন শহীদ হয়েছেন, আল্লাহ তাদের কবুল করুক। যারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাদের লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল। দুটি কমিশন গঠন করা হলো, কিন্তু আলোর মুখ দেখল না। কারণ সর্ষের মধ্যে ভূত ছিল, যোগ করেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তাদের সহকর্মীদের হত্যার কারণ জানতে চান। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে জনগণের সামনে উন্মুক্ত করুন। সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর দেশপ্রেমিক সুশৃঙ্খল বিডিআরকে বানানো হলো সীমান্তের চৌকিদার। আওয়ামী লীগ জনগণকে হত্যার মিশন নিয়ে নেমেছিল। ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। আমরা প্রত্যেকটা ঘটনার বিচার চাই। বিচার না করলে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, আমরা মেজরিটি-মাইনরিটি মানি না। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া সবাই এ দেশের গর্বিত নাগরিক। ভারত এটা নিয়ে ট্রামকার্ড খেলছে। অথচ সারা দুনিয়া দেখছে কে সাম্প্রদায়িক, কে সংখ্যালঘু হত্যাকারী। আমাদের জীবন থাকতে এ দেশের একটি ধূলিকণাও কাউকে দখল করতে দেব না।
সরকারকে বলব, কিছু মৌলিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন। তরুণ প্রজন্ম ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। তারাই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে, যোগ করেন জামায়াতের আমি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুনিয়ার জন্য অনুসরণীয় করে তুলুন। যেন সারা পৃথিবীর মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিভিন্ন মহলে জামায়াতে ইসলামীকে বলা হয় প্রতিক্রিয়াশীল দল। অথচ আমাদের মতো নির্যাতিত আর কে হয়েছে? কোন দলের ১১ জন প্রধান নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে? তারপরও আমরা দারুণ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে চলেছি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. মো. আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ১৯ বছর পর প্রকাশ্যে টাউনহল মাঠে প্রোগ্রাম করতে এসেছি। এ কুমিল্লা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ঢাকা-চট্টগ্রামের নাভি কুমিল্লা। ইন্ডিয়া ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে প্রথম কুমিল্লায় পড়বে। ভারতের ট্যাংক শহীদের লাশ দিয়ে প্রতিহত করব। আমরা শাল, গজার আর ইমানের কাঠ নিয়ে ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে যাব। মমতা আপা বলেছেন, বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে। শান্তিরক্ষী বাহিনী ভারতে পাঠাতে হবে। মমতা আপা, মাথা গরম করবেন না। মাথা গরম করে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
তিনি বলেন, ৬০ বছর আগে আমরা স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারিনি। বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, আমরা সৎ নেতৃত্ব পাইনি। আমরা গত ৫ আগস্ট যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি, কারও ব্যর্থতায় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। আপনারা একবার জামায়াতে ইসলামীকে পরীক্ষার সুযোগ দিন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরের আমির কাজী দীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রব, সাবেক চাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, কুমিল্লা মহানগরের নায়েবে আমির মু. মোছলেহ উদ্দিন এবং এ কে এম এমদাদুল হক মামুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
এসআই