ঢাকা: মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এমনটি বলছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজ আমরা এক নতুন যাত্রায় রয়েছি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকারের সুরক্ষার যাত্রা। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার আলোকে আমাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা এমন হতে হবে, যেখানে মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং কেউ আর নিপীড়িত হবে না।
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার দিবস’-এর এ বছরের প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত হয়ে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের আপামর জনগণের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাবন্দি থেকে, মিথ্যা মামলায় শাস্তি পেয়ে যে নির্মম পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, তা আমাদের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ অধ্যায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কখনো থেমে থাকা উচিত নয়।
তারেক রহমান বলেন, এই মুহূর্তে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। মানবাধিকার সুরক্ষিত রেখে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এ যাত্রায় সবার এগিয়ে আসতে হবে, জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
তারেক রহমান বলেন, জাতিসংঘ ১৯৫০ সালে ১০ ডিসেম্বরকে ‘মানবাধিকার দিবস’ ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর ‘মানবাধিকার দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য-‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’।
তিনি বলেন, এই দিনে প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক অধিকার হারানো নির্যাতিত মানুষের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোথাও যেন ভবিষ্যতে আর কেউ মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি ন্যায়নিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ দীর্ঘ একদলীয় শাসনের কালো অধ্যায় পার করেছে, যখন মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছিল, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ব্যক্তিগত ক্ষমতায়নের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছিলেন-তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক কিংবা সাধারণ মানুষ যেই হোন না কেন, মিথ্যা মামলা, কারাবাস, শারীরিক নির্যাতন, গুম ও হত্যার শিকার হয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অতীতে বাক, ব্যক্তি, চিন্তা, প্রার্থনা, মুদ্রণসহ নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে যারা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নির্মম নিপীড়নে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। যারা এখনো নির্যাতিত ও নিপীড়িত, তাদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সহমর্মিতা।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া আরেক বাণীতে তারেক রহমান বলেন, নারীমুক্তির বাণী বহন করতে গিয়ে তাকে সমাজের গোঁড়া রক্ষণশীলদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন কর্তব্যকর্মে অদম্য ও অবিচল। বেগম রোকেয়া তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হেনেছিলেন।
তিনি বলেন, সংসার, সমাজ ও অর্থনীতি জীবনের এই তিনটি ক্ষেত্রে নারীকে স্বায়ত্তশাসিত ও আত্মমর্যাদাশীল হতে বেগম রোকেয়া গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। নারী সমাজকে স্বাবলম্বী করতে তিনি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন শত কূপমণ্ডূকতার বাধার পরও। বেগম রোকেয়ার কর্মময় জীবন ও আদর্শ নারী সমাজকে আরও উদ্যমী ও অনুপ্রাণিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। কঠোর রক্ষণশীল পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন এদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত। তিনি তার নিজ জীবনের বাস্তবতার মধ্যে উপলব্ধি করেছিলেন সমাজে নারীর পশ্চাৎপদ অবস্থান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, শিক্ষাই নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রধান অবলম্বন। তার জীবন-সংগ্রামের লক্ষ্যই ছিল নারী শিক্ষার বিস্তারের মধ্য দিয়ে নারীমুক্তি। বিশেষভাবে পিছিয়ে পড়া এদেশের মুসলিম নারী সমাজকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য তিনি সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৪
টিএ/আরএইচ