ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলনে খেই হারানো বিএনপিকে বদলে ফেলার মিশনে শরিক হওয়া জিয়া অনুসারীদের প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে দলটিকে ‘আগুনসন্ত্রাস’ থেকে মুক্ত করা। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গদোষে দুষ্ট দলটির বিরুদ্ধে গত দুই বছর ধরে যে ‘আগুনসন্ত্রাসের’ অভিযোগ উঠছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় বদলে যেতে চাওয়া বিএনপি।
সূত্র জানায়, ‘তথাকথিত’ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘নাশকতা’ নির্ভর আন্দোলনে গত দুই বছরে আগুনসন্ত্রাসে দুই শতাধিক লোক নিহত হন।
এর মধ্যে চলতি বছর ৬ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯২ দিনের অবরোধ কর্মসূচি ও দফায় দফায় হরতাল পালনকালে দেড় শতাধিক মানুষ বিএনপি জামায়াতের নাশকতার বলি হন। এদের মধ্যে ৯০ ভাগই ছিলেন সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের তিন মাসের টানা অবরোধ কর্মসুচির মধ্যে মারা যান ১৬৫ জন। এদের মধ্যে ১০২ জন পেট্রলবোমার শিকার হন। বাকিরা ককটেল, সংঘর্ষ, গুলি এবং বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা যান।
‘আগুনসন্ত্রাসে’ নিহত ১০২ জন সাধারণ মানুষের মধ্যে ৪৩ জন ছিলেন বাস বা অন্য কোনো বাহনের যাত্রী। চালক ছিলেন ১০ জন এবং চালকের সহকারী ১২ জন। নয়জন শ্রমিক বা দিনমজুর, একজন পথচারী, পাঁচজন ছাত্র, দুজন প্রবাসী, সাতজন শিশু, নয়জন নারী ও একজন পুলিশ সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শী, নাশকতার শিকার হয়েও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, পুলিশ ও আগুনসন্ত্রাস চালাতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা খাওয়া ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিতে ওই সময় জানা যায়, বাস, হরতাল অবরোধ সফল করার মিশন হিসেবে ট্রাক বা যানবাহনে আচমকা হামলার ঘটনায় বিএনপি জামায়াতের কর্মীরাই জড়িত ছিলেন।
কিন্তু ইতিহাসের জঘন্নতম এই আগুন সন্ত্রাসের দায় শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিলেন বিএনপি প্রধান। তিনি বার বার চেষ্টা করেছেন আগুনসন্ত্রাসের দায় ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপানোর।
** বদলে যাচ্ছে বিএনপি, বাদ পড়ছেন খালেদা-তারেক
তবে বিএনপিতে থাকা বিবেকবান রাজনীতিকরা ভেতরে ভেতরে স্বীকার করে নেন, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সংস্পর্শে বিএনপির ‘চরমপন্থী’ অংশও আগুনসন্ত্রাসে অংশ নিয়েছে। সুতরাং এর দায় পুরোপুরি এড়ানোর সুযোগ নেই বিএনপির।
সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো কর্মসূচি দিলেই জামায়াত সেখানে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচির সময় এ চেষ্টা অব্যাহত রাখলে, তাদেরকে জোট থেকে বের করে দেব। অথবা তাদের কাছ থেকে আমরা সরে আসবো। ’
সূত্র জানায়, বিএনপির মূল নেতৃত্ব থেকে বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাইরে রেখে দল পুনর্গঠনের কথা যারা ভাবছেন, তাদের প্রধান এজেন্ডাই হলো জামায়াতের বলয় থেকে বিএনপিকে মুক্ত করা এবং আন্দোলনের নামে আগুনসন্ত্রাস গত দুই বছর ধরে চালানো হয়েছে, তা থেকে দলকে দূরে রাখা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, বিএনপিকে নতুন ফরম্যাটে দাঁড় করাতে আগ্রহী নেতারা মনে করছেন, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধার কারণে গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্রের অবৈধ চালান, সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, উগ্র জঙ্গীবাদের উত্থান এবং সর্বশেষ সরকারবিরোধী আন্দোলনে আগুনসন্ত্রাসের দায় খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপির ওপর এসে পড়েছে।
সুতরাং পুনর্গঠিত বিএনপির প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে দলকে থেকে জামায়াতমুখী নেতাদের বের করে দিয়ে ‘আগুনসন্ত্রাস’ থেকে বিএনপিকে রক্ষা করা। পাশাপাশি ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতাদের নেতৃত্বে এনে জিয়াউর রহমানের বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করা।
অবশ্য সোমবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া বলেছেন, বর্তমান বিএনপি জিয়াউর রহমানেরই বিএনপি। এটি শেখ হাসিনার বিএনপি নয়।
তবে সম্প্রতি দলটির শীর্ষ নেতাদের কথপোকথনে পরিষ্কার হয়েছে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি কোনো অবস্থাতেই জিয়াউর রহমানের বিএনপি নেই। জামায়াত প্রভাবিত বর্তমান বিএনপিকে তাই জামায়াত ও আগুনসন্ত্রাসমুক্ত বিএনপি বানাতে তরুণ নেতাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত আছেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করা বিএনপির অনেক নেতাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৫
এজেড/এমএমকে