ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ছুটির মধ্যেও সরগরম রয়েছে জাতীয় রাজনীতির সূতিকাগার খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন।
এখানে পদপ্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।
গত ৮ মে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ইউনিটের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। এরপর থেকেই হঠাৎ চাঙা হয়ে ওঠে ছাত্রলীগের রাজনীতি। কারণ গত দু’বছর থেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ। তাই পদপ্রত্যাশীরা ছিলেন অনেকটাই হতাশ। ফলে অনেক হেভিওয়েট নেতাও রাজনীতি ছেড়ে বিভিন্ন পেশায়ও ঢুকে পড়েন।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন পদপ্রত্যাশীরা। নতুন উদ্যমে মাঠ গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। নিজস্ব সমর্থক নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লবিং, তদবির শুরু করেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী নেতাদের কাছে। ঝিমিয়ে পড়া অনেক নেতাও সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ইতোমধ্যে, গত ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২৮ মে ঢাকা মহানগর উত্তর ও ৩০ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ পাওয়ার জন্যও সক্রিয় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা ও মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়েছে গত ১৯ জুন। বর্তমানে ক্যাম্পাস অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেলেও ভিড় কমেনি মধুর ক্যান্টিনে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদপত্যাশীদের পাশাপাশি ভিড় করছেন মধ্যম সারির নেতারাও। পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটিতে জায়গা করে নিতে ইতোমধ্যেই তারা তদবির শুরু করেছেন বিভিন্ন ইউনিটের নির্বাচিত নেতাদের কাছে।
পদপ্রত্যাশী ও মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন না তাদের কেউই। কারণ সম্মেলনকে সামনে রেখে এখন প্রতিটি মুহূর্তই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনে প্রভাববিস্তারকারী নেতাদের কাছে তদবিরের পাশাপাশি তাদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে নিজ নিজ সমর্থকদের মন জয় করতে। তাই অনেক নেতারই ঈদে বাড়ি যাওয়ার ফুরসত মিলছে না।
কেন্দ্রীয় পদপ্রত্যাশী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক বছর প্রতি ঈদই বাড়িতে বাবা-মা ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে করেছি। কিন্তু এবার আর সে সুযোগ নেই। কারণ ঈদের সপ্তাহ খানেক পরই সম্মেলন। তাই বাড়ি গেলেই পিছিয়ে পড়তে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ছিলেন এমন একজন নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে যেহেতু আসতে পারলাম না, তাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভালো একটি পদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংগঠনের প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছি, মধুর ক্যান্টিনে নিয়মিত যেতে হচ্ছে। তাই এবার আর ঈদে বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না।
তবে সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের এ সক্রিয়তা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সেহাগ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন মানে হচ্ছে ছাত্র রাজনীতির একটি উৎসব। পদপ্রত্যাশীদের এই আগ্রহের বিষয়কে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাই। কারণ এটি প্রমাণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কতটা জনপ্রিয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এসএ/টিআই