ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আস্থার সংকটে বিএনপি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
আস্থার সংকটে বিএনপি

ঢাকা: ওমরা পালন করতে গেলেই দল ভেঙে যাবে। অগত্যা দলের ভাঙন ঠেকাতে সৌদি আরব সফর বাতিল করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট!
 
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে দায়িত্ব দিলে দলের অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং কোনো সংকটকালেই নিজের বিকল্প হিসেবে মওদুদ আহমদের কথা ভাবেন না বিএনপি চেয়ারপারসন।
 
বিভিন্ন মামলায় গত তিন বছরে অসংখ্যবার কারাযাপন করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার জায়গায় চলতি দায়িত্ব পালন প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খানের কথা চিন্তাও করেন না খালেদা জিয়া। পাছে, দলটাকেই বিক্রি করে দেন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
 
ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ সুযোগ পেলেই দল ভাঙতে পারেন। তাই দলের এই ভাইস চেয়ারম্যানের ওপর বিন্দু মাত্র আস্থা নেই বিএনপি চেয়ারপারসনের।
 
অপরদিকে দলীয় স্বার্থের চেয়ে বড় ছেলে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেন খালেদা জিয়া। কয়েকজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, সাবেক আমলা ও স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিতে পরিচালিত হন তিনি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতাদের চেয়ে এরাই গুরুত্ব পান বেশি।
 
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামকে পাশ কাটিয়ে ননপলিটিক্যাল ব্যক্তিদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ায খালেদা জিয়ার বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত-ই এখন বিএনপির জন্য ব্যুমেরাং হচ্ছে। সুতরাং তার ওপর আস্থা রাখা যায় না।
 
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে ডজন খানেক নেতার সঙ্গে কথা বলে খালেদা জিয়া ও শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতার এ বিষয়টি জানা গেছে।
 
তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের বিশ্লেষণ কিছুটা ভিন্ন।
 
বিএনপিতে আস্থার সংকট নেই দাবি করে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের পর অনিবার্যভাবেই দলের নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার মতো কিছু ঘটেনি।
 
সম্প্রতিকালে দলের শীর্ষ নেতাদের ফোনালাপের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের কোনো কাজের বা সিদ্ধান্তের সমালোচনাকে যারা আস্থার সংকট হিসেবে দেখতে চান-সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আস্থার সংকটের কারণেই অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ইতি টেনে ৫ এপ্রিল ঘরে ফিরলেও গত সত্তর দিনে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকেননি খালেদা জিয়া।
 
তবে ৭ জুলাই শীর্ষ নেতাদের গুলশান কার্যালয়ে ডেকে পাঠান তিনি। সাংগঠনিক কোনো এজেন্ডা ছাড়া হঠাৎ ডাকা ওই বৈঠক থেকে সিনিয়র নেতাদের সাফ জানিয়ে দেন, দল ভাঙার ইচ্ছা থাকলে তারা যেন বিএনপি থেকে সরে দাঁড়ান।
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের শীর্ষ নেতাদের ওপর আস্থা না থাকার কারণেই বিদেশ সফরের আগের দিন (শেষ পর্যন্ত সৌদি সফর বাতিল করেন খালেদা জিয়া) তাদের প্রতি এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ বিএনপি চেয়ারপারসনের।
 
সূত্রমতে, যাদের নিয়ে দল পরিচালনার কথা, তাদের ওপর দলীয় প্রধানের আস্থা না থাকার কারণেই বিএনপির সংকট আরো ঘনিভূত হচ্ছে। দলকে সুসংহত ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এটি প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপিতে কোনো আস্থার সংকট দেখছি না। আস্থার সংকট থাকলে অনেক আগেই দলে ভাঙন দেখা দিতো। সরকারের টোপ গিলে কেউ কেউ হয়তো পাতানো নির্বাচনে অংশ নিত। যেহেতু এ ধরনের ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি, সেহেতু জোর দিয়েই বলা যায়, দলে কোনো আস্থার সংকট নেই।   
 
দলীয় সূত্রমতে, শীর্ষ নেতাদের ওপর যেমন আস্থা রাখতে পারছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন, তেমনি চেয়ারপারসনের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না শীর্ষ নেতারা। সে কারণেই মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও উদীয়মান নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খানের মতো শীর্ষ নেতারা বলছেন, এই বিএনপি (খালেদা জিয়ার বিএনপি) দিয়ে হবে না। জিয়ার বিএনপি দরকার।
 
অর্থাৎ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি শীর্ষ নেতারা আর আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা বিকল্প নেতৃত্বের কথা চিন্তা করছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৫
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।