ঢাকা: সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প (ইন্টার-রিভার লিংকিং প্রজেক্ট) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
বুধবার (২২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা জানান বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ছাড়াও অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. রিপন বলেন, ভারত তার নদীগুলোর মধ্যে ইন্টার-লিংকিং প্রজেক্ট চালু করার কথা ভাবছে। গত ১৩ জুলাই স্থানীয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেশটির পানিসম্পদ মন্ত্রীকে উদ্ধৃতি করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তিনটি ইন্টার-রিভার লিংকিং প্রজেক্ট নিয়ে ভারত প্রাথমিক কাজ শুরু করতে চায়। এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাও ছিল। অনেক আগে থেকে দেশটির দু’টি রাজ্যের মধ্যে পানি নিয়ে বিরোধ চলছিলো। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে আদালত আন্তঃদেশীয় পানি প্রবাহের নির্দেশনা দেয়।
তিনি বলেন, বিষয়টি ভারতের নিজস্ব ব্যাপার হলেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদী প্রবহমান। তাই এ প্রজেক্টের কারণে বাংলাদেশ চরম পানি সংকটের মধ্যে পড়বে। তারা ইন্টার-রিভার লিংকিং প্রজেক্টের নামে বাংলাদেশ থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিতে পারে না।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারত তার দেশের মধ্যে বিভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ করছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে তারা পানি আটকে রেখে শুষ্ক মৌসুমে নিজ দেশে প্রবাহিত করে চাষাবাদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজে লাগাবে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ থাকবে পানিশূন্য।
বিএনপির মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভারতের এ পদক্ষেপে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবাদ না করায় তাদের ভূমিকা নিয়ে বিএনপি উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
ড. রিপন বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের সঙ্গে নদীর পানি সংক্রান্ত বিষয়ে বহু আলোচনা ও দেন-দরবার করেছে। সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিলো। তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যর সমাধানের শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েও কোনো এক কারণে সেটি হয়নি। কিন্তু ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন, এই সময়ে আমাদের উল্লেখযোগ্য কিছুই অর্জিত হয়নি। এই সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যতগুলো চুক্তি হয়েছে, অধিকাংশ চুক্তিতে ভারত লাভবান হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রানজিট আমরা সমর্থন করি, কিন্তু বর্তমান সরকার ভারতকে যে ট্রানজিট সুবিধা দিচ্ছে, এতে বাংলাদেশের একটি লাভের অংশ প্রয়োজন ছিলো।
‘বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী কি ঘুমান?’ এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ১৩ জুলাই ভারতের গণমাধ্যমে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, মানস নদী নিয়ে কাজ করার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি।
ড. রিপন বলেন, এ বিষয়ে বিএনপি চায়, বাংলাদেশের শুধু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণায় সম্পৃক্ত হোক এবং এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব বৈঠকে বসুক। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো এবং বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া।
সরকার চাইলে এ বিষয়ে প্রয়োজনে বিএনপি টেকনিক্যাল সাপোর্টসহ আনুষঙ্গিক এক্সপার্ট সাপোর্ট দিবে বলে জানান ড. রিপন। অন্যথায় ভারতের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সরকারের নীতি বাংলাদেশের জন্য ‘ডেথ সেন্টেন্স’ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৫/আপডেট ১৭৩৯ ঘণ্টা
এনএইচএফ/এইচএ