ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

দুই দুর্নীতি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ৩ আগস্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
দুই দুর্নীতি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ৩ আগস্ট ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৩ আগস্ট।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের আংশিক জেরা শেষে বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) এ দিন ধার্য করেছেন আদালত।



জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

দুই মামলায়ই এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রথম সাক্ষী হারুন-অর রশিদ। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তাকে আসামিপক্ষের জেরা শুরু হয়েছে গত ১৮ জুন। বৃহস্পতিবার তাকে আংশিক জেরা করেন খালেদা জিয়ার পক্ষে তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

আগামী ধার্য তারিখে দুই মামলায়ই প্রথম সাক্ষীর জেরা শেষ হলে বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।

মামলা দু’টির প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ জামিনে থাকা আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন।

আদালতে শুরুতেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী হারুন-অর রশীদকে জেরা পেছানোর আবেদন জানান খালেদার আইনজীবীরা। তারা আবেদনে উল্লেখ করেন, সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিল চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদন সম্প্রতি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তারা আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করবেন। কিন্তু আদেশের কপি পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করে জেরা স্থগিতের আবেদন জানান আইনজীবীরা।

আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করে আগামী ধার্য তারিখের আগেই উচ্চ আদালতে শুনানি শেষ করার আদেশ দেন।

অন্যদিকে জামিনে থাকা দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের জামিন স্থায়ী করার আবেদন জানান তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এন এম আবেদ রাজা। এ আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।

দুদকের পক্ষে আদালতে ছিলেন সংস্থার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।

অন্যদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

গত বছরের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবারসহ হাজির হয়েছেন মাত্র ১১ দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
এমআই/ এএসআর

** প্রথম সাক্ষীর অসমাপ্ত জেরা চলছে
** খালেদার দুই দুর্নীতি মামলার শুনানি শুরু
** আদালত চত্বরে খালেদা
** আদালতের পথে খালেদা
** খালেদার দুই দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সাড়ে দশটায়
** বৃহস্পতিবার আদালতে যাচ্ছেন খালেদা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।