ঢাকা: শোকের মাস আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিজস্ব স্বকীয়তা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এ বছর বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাৎ বাষির্কী।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, আমরা আপনাদের সৃজনশীল প্রোগ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জানতে, তার সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে পারবো। আপনারা বঙ্গবন্ধুকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আহবান জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
মতবিনিময় সভায় সিনিয়র সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে সার্বজনীন করা এবং বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে জাতীয়ভাবে পালনের মতামত দেন। এজন্য আওয়ামী লীগকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানান তারা।
সভায় সাংবাদিকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নন, তিনি সকলের। বঙ্গবন্ধুকে কোনো দলের সম্পদ হিসাবে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক হবে না। বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতির সম্পদ। তাই বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী আমাদের জাতীয়ভাবে পালন করতে হবে।
সাংবাদিকদের মতামত শোনার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু এ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। আমরা আর কিছু চাই না। আমরা শুধু চাইছি, সব দল ও সংগঠন এবং গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতার শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন করবো।
বঙ্গবন্ধু কেবল আওয়ামী লীগের নন, তিনি দেশের সব মানুষের জাতির পিতা। অথচ ভারতের মহাত্মা গান্ধী ও পাকিস্তানের জিন্নাহর মতো আমাদের জাতির পিতার জন্ম ও শাহাদাৎবার্ষিকী এখনো সার্বজনীন হতে পারেনি। তবে ইতিহাস কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। একদিন আমরাও হয়তো বা আমাদের জাতির পিতাকে সার্বজনীন করতে পারবো।
বঙ্গবন্ধুকে আপনারা যথাযথভাবে তুলে ধরবেন এটাই আমাদের চাওয়া। কোনো গণমাধ্যমকে আমরা বৈরি মনে করি না। আমাদের সরকার এখন ক্ষমতায় আছে। আমরা সব সময়ের মতো এখনও আপনাদের পাশে আছি।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মসূচিতে অনুমোদন দিয়েছেন। শিগগিরই তা সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, প্রতিদিন মিডিয়াতে কথা বললে জনপ্রিয়তা বাড়ে না, কমে। আর যতো কম কথা বলা যায়, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ততো কম থাকে। আমি যদি প্রতিদিন কথা বলি তবে দলের অন্য নেতারা কথা বলার সুযোগ পাবেন না। এটা তো ঠিক না।
মতবিনিময় সভায় সিনিয়র সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নাঈম নিজাম, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, ইনকিলাবের সম্পাদক বাহাউদ্দিন, সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, একাত্তর টেলিভিশনের মোজাম্মেল বাবু প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগাঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক প্রমুখ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সভায় বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের সকলের চেতনা। তিনি কোনো দলের সম্পদ নন, সমগ্র জাতির সম্পদ। যে মিথ্যা ধারণা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এতোদিন দেওয়া হয়েছিল, সেটি এখন কাটতে শুরু করেছে জেনে আমরা আনন্দিত।
মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সম্পত্তি করা হলেই সমস্যা। বঙ্গবন্ধু শুধু আওয়ামী লীগের সম্পত্তি হতে পারেন না। তিনি সমস্ত বাঙ্গালি জাতির সম্পদ।
আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই তার মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য একটি জাতীয় কমিটি করতে হবে। যেখানে সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকবেন। সেখানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে শুধু ১৫ আগস্টের শোক দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যমে তাকে স্মরণ করতে হবে। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে ভালোভাবে জানাতে পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনের নামে যাতে কোনো চাঁদাবাজি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী দলের নেতাকর্মীদের বেশি করে পাঠ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তারা বঙ্গবন্ধুর মতো আদর্শবাদী হয়ে উঠবেন।
চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ইতোমধ্যই দলের পক্ষ থেকে আমাদের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন। কারো বিরুদ্ধে জাতীয় শোক দিবস পালনের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ এলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৫
এসকে/এএসআর