ঢাকা: আগাম নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই সরকারের। এই দাবিকে সরকার কোনো গুরুত্বও দিচ্ছে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে আবারও আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এ সময় তিনি তার দীর্ঘ দিনের তত্ত্বাবধায়ক দাবি থেকেও সরে এসে যে কোনো সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়েছেন। তবে খালেদা জিয়া তার অবস্থান থেকে সরে এসে আগাম নির্বাচনের যে দাবি জানিয়েছেন সে দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার।
সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগে সরকার নির্বাচনে যাবে না।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো চাপ বা সমঝোতার কাছে আত্মসমর্পন করে সরকার নির্বাচন দেবে না। এ ব্যাপারে সরকার আগের অবস্থানেই দৃঢ় রয়েছে। দেশে আগাম নির্বাচনের এমন কোনো প্রয়োজনীয়তা বা পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি বলে ওই নেতারা মনে করেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের পর সরকারের উপর বিএনপি আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টা চালিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো দিক থেকে কিছু সমস্যা থাকলেও সেটাও সরকার কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেশী ভারত, চীন, জাপান, ইংল্যান্ড, রাশিয়াসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সরকার সম্পর্ক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে। ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘুরে গেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্টেরও বাংলাদেশ সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরও অন্য কোনো দিক থেকে কোনো চাপ এলেও সরকার তা কূটনৈতিক তৎপরতা দিয়ে মোকাবেলা করেই অগ্রসর হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার যে সব উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সেই কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নই এখন প্রধান লক্ষ্য। বিশেষ করে পদ্মাসেতু, মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলি টানেল, ঢাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সরকারের নেয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার কর্মসূচি সরকার আগেই ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি এসেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চায়।
আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে পৌরসভা নির্বাচন। এর পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এই বিষয়গুলো সামনে নিয়েই সরকার অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থায় বিএনপির নির্বাচনের দাবিকে পাত্তা দেয়ার কোনো কারণ নেই বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, আগাম নির্বাচন খালেদা জিয়ার চিন্তা। এটা জাতির চিন্তা না। জাতির চিন্তা এখন বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ করা। খালেদা জিয়া একেক সময় একেক ধরনের মনোকষ্ট থেকে একেক কথা বলছেন। এতো দিন বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এখন বলছেন না হলেও চলবে। তার এ সব কথা নিয়ে দেশের মানুষ ভাবে না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আগাম নির্বাচন দিতে হবে কি কারণে। দেশে এমন কি হয়েছে যে নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হবে। নির্বাচন হবে সংবিধানসম্মত সময়ে।
মতিয়া বলেন, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য তিনি (খালেদা জিয়া) আন্দোলন করলেন, জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা করলেন, নির্বাচন বানচালের সব অপতৎপরতা চালালেন। এখন যদি তত্ত্বাবধায়ক ছাড়াই নির্বাচনে যেতে যান তাহলে এগুলো কেন করলেন?
মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে কেউ কেউ আপোসহীন বলেন। কিন্তু উনি তো উনার স্বামী জিয়াউরে রহমানের হত্যা নিয়ে আপোসের রাজনীতি শুরু করেছেন। স্বামী হত্যার বিচারও তিনি চাননি। ক্ষমতায় থেকে বিচারের উদ্যোগও নেননি। এরশাদের বিরুদ্ধে জিয়া হত্যার অভিযোগ করে সেই এরশাদের কাছ থেকেই বাড়ি নিয়েছেন, অর্থ নিয়েছে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়েছেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে আপোস করেছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সোমবার ন্যাপের (মোজাফফর) প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বলেন, নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে। এর আগে খালেদা জিয়া চেষ্টা করলে করতে পারেন। কিন্তু কোনো লাভ হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
এসকে/জেডএম/এটি