ঢাকা: হজ নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় দলীয় পদ ও মন্ত্রিত্ব থেকে বহিষ্কারের পর সংসদ সদস্য পদ হারাতে বসা টাঙ্গাইলের এমপি লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন, তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ছিলো আওয়ামী লীগের ভুল।
রোববার(২ আগস্ট’২০১৫) প্রধান নির্বাচন কমিশনার(সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ দাবি করেন।
লতিফ সিদ্দিকী ৮ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক সফরকালে বিগত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলের অধিবাসীদের সঙ্গে আলাপকালে আমার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার যে কষ্টকল্পিত, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা আলোচনার স্বার্থে যদি ধরে নেওয়া হয় আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি, তাহলে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্য পদ বাতিল করার এখতিয়ার দলের কেন্দ্রীয় সংসদের নেই।
কেননা, আমি বাংলাদেশ সরকারের তথা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে গিয়েছি এবং একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে উক্ত বক্তব্য দিয়েছি বলে বিবেচনা করার কোন সুযোগ নেই। অতত্রব আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে আমাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটাই ভুল। সে সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তীতে যত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে এবং হবে তাও ভুল বলে আইন অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে।
সংবিধানের ৬৬(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিতর্ক নিষ্পত্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেও চিঠিতে দাবি করেন তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী দাবি করেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক বিচার্য বিষয়ের অন্তর্গত নয় বিধায় উক্ত অভিযোগ প্রাথমিক স্তরেই খারিজ হবে।
নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি সিইসির কাছে আরও দাবি করেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের কোনো একটি সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সংসদ সদস্য পদ বজায় রাখার ক্ষেত্রে অযোগ্যতার আওতায় পড়ে না, কিংবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত দুটি কারণসমূহের একটিও আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি দল থেকে পদত্যাগও করিনি কিংবা সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে দলের কোনো সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোটও দেইনি।
এছাড়া আমার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক আনীত অভিযোগ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণসমূহের মধ্যে পড়ে না বিধায় জাতীয় সংসদের স্পিকার যেমন সংবিধানের ৬৬(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে চিঠি প্রেরণ করতে পারেন না। তেমনি সিইসিও এদসংক্রান্ত কোনরূপ শুনানি কিংবা নিষ্পত্তি করার কোনো প্রকার আইনি অধিকার সংরক্ষণ করেন না।
এজন্য তিনি সিইসিকে বিরোধ নিষ্পত্তির বির্তকে না জড়িয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্পিকারের কাছেই ফেরত পাঠানোর দাবি করেন।
সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদ থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে ১৩ জুলাই (সোমবার) চিঠি পাঠান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। মোট ছয় পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদ বাতিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্পিকারকে পাঠানো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চিঠিও জুড়ে দেন তিনি।
সে অনুযায়ী, গত ১৬ জুলাই (বৃহস্পতিবার) লতিফ সিদ্দিকী ও বিরোধ উত্থাপনকারী হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে ২ আগস্টের মধ্যে নিজ নিজ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে বলে ইসি।
ইসির সে নির্দেশনা অনুযায়ী, সৈয়দ আশরাফও তার পক্ষে মঙ্গলবার যুক্তি তুলে ধরে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ও উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক রেজাউল কবীর কাউসার।
আশারফুল ইসলাম তার চিঠিতে যুক্তি দেখিয়েছেন, দলের গঠনতন্ত্রের নির্দিষ্ট ধারা মোতাবেক সর্বসম্মতিক্রমে দলের সকল পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে যেহেতু বহিস্কৃত হয়েছেন, সেহেতু লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাই তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য পদে থাকার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন।
এ অবস্থায় চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ পদ বাতিলের জন্য সিইসিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৫
ইইউডি/এনএস/
** অতীত ও আইন দেখে লতিফের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
** শুনানিতেই লতিফ সিদ্দিকীর ভাগ্য নির্ধারণ
** নিজ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিতে আশরাফুল-লতিফকে চিঠি