ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপি পুনর্গঠন কতদূর?

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৫
বিএনপি পুনর্গঠন কতদূর?

ঢাকা: দল পুনর্গঠন শেষে ফের আন্দোলনের কথা বললেও এ কাজে এখন পর্যন্ত হাত দিতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুদকের করা মামলায় বার বার আদালতে হাজিরা, দাপ্তরিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে সিদ্ধহস্ত নেতাদের কারাগার ও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান এবং নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো কাজই গুছিয়ে উঠতে পারছেন না বিএনপি প্রধান।


 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দু’টি ‘ব্যর্থ’ আন্দোলন শেষে বিএনপির ভবিষ্যৎ ও নিজের নেতৃত্ব সম্পর্কে কয়েকজন শীর্ষ নেতার নেতিবাচক অবস্থান পরিস্কার হওয়ার পর দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া।
 
দলে গতি ফিরিয়ে আনতে এবং শীর্ষ নেতাদের মুখ বন্ধ করতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের দলের নেতৃত্বে আনার ঘোষণাও দেন তিনি।
 
টানা ৯২ দিন অবরোধ কর্মসূচি শেষে ৫ এপ্রিল ‘খালি হাতে’ ঘরে ফেরার পর গত চার মাসে একাধিক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে অসংখ্যবার দল পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
 
ঈদুল ফিতরের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কোনো রাখঢাক না করেই খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের হামলা, মামলা, নিপীড়ন, নির্যাতনে দলের নেতা-কর্মীরা বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে আছেন। সুতরাং দল রিঅর্গানাইজ করেই ফের আন্দোলনে যাবে বিএনপি।
 
ঈদের পর গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধি ও জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় একাধিকবার দল পুনর্গঠনের কথা বলেন খালেদা জিয়া।
 
সূত্রমতে, বার বার দল পুনর্গঠনের আওয়াজ তুললেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ বা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেননি বিএনপি প্রধান।
 
গত ৭ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক বৈঠকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেও দল পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেননি খালেদা জিয়া। বরং দল ‘ভাঙার চেষ্টারত’ নেতাদের বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
 
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারামুক্ত হলেও এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করায় খালেদা জিয়ার একার পক্ষে দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
 
এদিকে এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত মির্জা ফখরুল ইসলামের খুব শিগগিরই দেশে ফিরছেন না বলে জানা গেছে। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে আমেরিকা যেতে পারেন তিনি।
 
তাছাড়া দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও আছেন কারাগারে। একাধিক মামলায় আটক রিজভীর জামিন আদেশ স্থগিত হওয়ায় কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। সাংগঠনিক কাজ তরান্বিত করতে রিজভীকেও প্রয়োজন ছিল খালেদার।
 
সূত্র জানায়, দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার কাউন্সিল শেষ করে চলতি বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ভেবেছিলেন বিএনপি প্রধান। কিন্তু বেশিরভাগ নেতা কারাগার ও আত্মগোপনে থাকায় এবং দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ও দপ্তর সম্পাদক কারাগারে থাকায় সাংগঠনিক জেলাগুলোর কাউন্সিল শেষে জাতীয় কাউন্সিল করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না বিএনপি প্রধানের।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে ‘সদাব্যস্ত’ থাকা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলার সময়টুকুও পাননি। একবার ফোন রিসিভ করে আধা ঘণ্টা পর ফোন করার পরামর্শ দেন। পরে অবশ্য ফোন করে তাকে আর পাওয়া যায়নি।
 
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, পরিস্থিতি এখন আমাদের অনুকুলে নেই। মামলা, হামলায় নেতা-কর্মীরা জর্জরিত। কোনো কাজই আমাদের ঠিক মত করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও দল পুনর্গঠনসহ সাংগঠনিক তৎপরতা থেমে নেই। আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই কাজগুলো এগিয়ে চলছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৯ আগস্ট ৭, ২০১৫
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।