ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের দেশি-বিদেশি চক্রান্ত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
‘সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের দেশি-বিদেশি চক্রান্ত’

ঢাকা: দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে দেশীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চক্রান্তও রয়েছে বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। সুদূরপ্রসারী কোনো ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে একের পর এক গুপ্তহত্যা ও হামলার ঘটনা ঘটনানো হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।



ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বললে তারা দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি চক্র বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক ওই চক্রের সঙ্গে সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী যুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ওই গোষ্ঠী দেশীয় গোষ্ঠীটিকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তারা এ চক্রান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশেও আফগানিস্তান, ইরাক বা সিরিয়ার মতো ঘটনা তৈরির পাঁয়তারা করছে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে।

বাংলাদশে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের(ইসলামি স্টেট) উপস্থিতি প্রমাণের জন্যই তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে বলেও মনে করছেন ওই নীতিনির্ধারকরা।

আইএসের তৎপরতা প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আইএস আছে এটা স্বীকার করানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ আছে বলেও জানান তারা। আর এটা প্রমাণ করতে পারলে বাংলাদেশের ওপর বিদেশি আক্রমণের পাঁয়তারা চালানো হতে পারে।

দুই বিদেশি নাগরিককে হত্যা, বøগার, প্রকাশক, পুলিশ হত্যা ও গুপ্ত হামলার ঘটনাগুলো এরই অংশ বলেও মন্তব্য করেন তারা।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারাও তাদের বক্তব্যে এ ধরনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন।

গত ০৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ব্যপারে খোলামেলা কথাই বলেছেন। তিনি সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকারবিরোধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত আছে। চক্রান্তকারীদের বহু পরিকল্পনা আছে। তারা আরও বেশিদূর যেতে চায়। তবে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এ দেশের কিছু মানুষ সম্পৃক্ত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশকে কোনোমতে অনিরাপদ ঘোষণা করা, বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে, যদি এ ধরনের কিছু স্বীকার করানো যায়- তাহলে বাংলাদেশের ওপর তারা হামলে পড়তে পারে। প্রচণ্ড চাপ আছে, কেন স্বীকার করি না।

আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে সর্বনাশ হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, সিরিয়া, ইরাক, মিসর, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো পরিবেশ বাংলাদেশে সৃষ্টি হোক তা আমাদের কারও কাছে কাম্য নয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে মানুষ হত্যা, এরপর এ বছর আবারও মানুষ পুড়িয়ে মারা- এসব করার পরও যখন দেখেছে, কিছু করা যাচ্ছে না, তখন একটি শ্রেণি নেমে পড়েছে গুপ্তহত্যায়।

বাংলাদেশে আইএস আছে বা জঙ্গি আছে যদি এ ধরনের একটি স্বীকৃতি আদায় করতে পারে, আমাদের অবস্থাটা কী হবে? দেশের মানুষ কি একবার ভেবে দেখবেন? আজকে সিরিয়ায় কী হচ্ছে, ইরাকে কী হচ্ছে? আফগানিস্তান-পাকিস্তানের ঘটনাই কি একবার চিন্ত করেছেন। এসব জায়গায় যে ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে, সেই জায়গায় বাংলাদেশকে নিয়ে আসার একটি ষড়যন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে যেমন আছে, তেমনি আমাদের দেশের কিছু মানুষও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলে দেন, আমরা চাই না এ ভূখণ্ড কেউ ব্যবহার করুক। কথা স্পষ্ট, আমার কথাগুলো খুবই স্পষ্ট। কোনো প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান এভাবে বলবেন না।

আওয়ামী লীগের নেতা খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম গত ১ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোচনা সভায় কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে একই ধরনের কথা বলেন। তিনি বলেন, যে দেশটি বিশ্বের দেশে দেশে জঙ্গিবাদের জন্ম দিয়েছে সেই দেশটি বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো ভয়ঙ্কর খেলায় মত্ত কি-না আমার প্রশ্ন। এই দেশটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো। যে দেশটি বিশ্বের দেশে দেশে জঙ্গিবাদের জন্ম নিয়েছে, কোথাও কোথাও মারও খেয়েছে। আবার আমাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের লড়াইয়েও আছে সেই দেশটি বাংলাদেশকে নিয়ে ভয়ঙ্কর কোনো খেলায় মত্ত কি-না সেটাও আমার প্রশ্ন।

বাংলাদেশ সময় ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৫
এসকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।