ঢাকা: নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি পিছিয়ে আগামী বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্ধারণ করেছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আমিনুল ইসলামের আদালতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে।
প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা অভিযোগ গঠনের শুনানি স্থগিত ও আদালতে হাজির হতে সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) নতুন দিন ধার্য করেন আদালত।
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজির হননি খালেদা জিয়া। তার পক্ষে সময়ের আবেদন জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া।
একইসঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানি স্থগিত রাখারও আবেদন জানান সানাউল্লাহ মিয়া। আবেদনে তিনি বলেন, মামলাটি বিচারিক আদালতে চলবে বলে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ শুনানি স্থগিতের আরজি জানান তিনি।
মামলার ১১ আসামির মধ্যে জামিনে থাকা সাতজনের অন্যতম সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনের পক্ষেও সময়ের আবেদন জানান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন মেজবাহ।
অন্য ছয়জন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, বাপেক্স্’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান এবং ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া আদালতে হাজির ছিলেন।
কারাগারে আটক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ পলাতক আছেন।
গত ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন খালেদা জিয়া। ওইদিন ২৮ ডিসেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করে ওইদিন খালেদাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
গত ১৮ জুন খালেদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। মামলাটি বাতিলে খালেদার রিট আবেদন ও এ সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দু’টিও বিচারিক আদালতে চলবে বলে চূড়ান্ত রায় দিয়ে খালেদাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এসব দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে পৃথক পৃথক রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এসব রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত ও রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। কয়েক বছর ধরে স্থগিত থাকার পর মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায় দুদক। পরে পৃথক পৃথক শুনানি শেষে মামলা তিনটি সচলের রায় দেন হাইকোর্ট।
এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।
২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।
অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এমআই/এএসআর
** আদালতে হাজির হতে সময় চাইলেন খালেদা