ঢাকা: ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেদিন ব্যালটের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়ার বিচার করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে অতিথি হিসেবে আসেন মন্ত্রী।
৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা খালেদার বিচারের দায়িত্ব বাংলার মানুষের আদালতে ছেড়ে দিয়েছি। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ খালেদার বিচার করবে ব্যালটের মাধ্যমে। সেদিন খালেদা এর জবাব পাবেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হবে। বিএনপিসহ সব দল অংশ নেবে। খালেদা যে ভুল আগে করেছেন, সেটি আর করবেন না।
তোফায়েল বলেন, বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আঘাত করেছেন খালেদা। শহীদের সংখ্যা নিয়ে তিনি যা বলেছেন, সেটি পাকিস্তান বলে। বহির্বিশ্বে আমরা এ সংখ্যাটি বলেছি, গৃহীতও হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান ও খালেদা সেটি মানেন নি। খালেদা জিয়া অন্যায় করেছেন, তিনি প্রমাণ করেছেন- বাংলাদেশি নন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়), নাম উচ্চারণ করতে চাই না। তার নাম উচ্চারণ করলে ছোট হয়ে যাই। তিনি বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তাদের নিয়ে যে মন্তব্য তিনি করেছেন, সেটিই বর্তমান বিএনপির আসল রূপ। ’
অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের অবস্থা থেকে বাংলাদেশ সরে যায়নি। যারা এসব বলেছে, তারাও কোনো না কোনো দলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী। নির্বাচন নিরপেক্ষ না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ৫ জানুয়ারি বিএনপি নির্বাচনে এলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন হতো।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা বিষয়ে অনেকে ভুল ব্যাখ্যা করে। প্রধানমন্ত্রী পদাধিকারবলে সংশ্লিষ্টদের কাজের তদারকি করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পালাক্রমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে অবস্থান লাভ করবে। নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিদের উত্থান হতে আমরা দেই না। চট্টগ্রাম, গাজীপুর, মিরপুরে ধরা পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে এসব মোকাবেলা করছে। দু’জন বিদেশি নিহত হয়েছেন, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতি সবকিছুর উর্ধ্বে। খালেদা সব অরাজকতা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রসহ ৫ মন্ত্রণালয় নেওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে ২০১৩’র ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ডাকা হয়েছিল বলে জানান মন্ত্রী। কিন্তু জবাবে খালেদা ও তার জোটের আচরণ ঠিক ছিল না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন বন্ধে গাছ কাটা, পুলিশ হত্যা, স্কুল ধ্বংস, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হত্যা, নিষ্পাপ শিক্ষিকা মা হত্যাসহ জোটের বিভিন্ন কার্যকলাপের সমালোচনা করেন তোফায়েল আহমেদ।
তার মন্ত্রণালয়ের সাফল্য, আগামীতে রপ্তানির টার্গেটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তোফায়েল। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের তথ্য আবারও সাংবাদিকদের জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, খাদ্য এখন উদ্বৃত্ত। রপ্তানি করছি। চাল রপ্তানি করছি আমরা নিয়মিত। যারা বলেছিল, বাংলাদেশ হবে দরিদ্র দেশের মডেল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সেসব দেশই আজ বলছে, বাংলাদেশ নাথিং বাট অ্যা মিরাকল। বাংলাদেশে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কুঁড়েঘর ছিল, তা এখন জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।
তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতির পার্থক্য তুলে ধরেন।
সংগঠনের সভাপতি শ্যামল সরকার ও অন্য সদস্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
এসকেএস/জেডএস