ঢাকা: এভাবে লেখাটা অনেকেই ভালোভাবে নিতে পারবেন না। অনেকে যে চটে যাবেন এটাও নিশ্চিত করে বলতে পারি।
জাতভাই (সাংবাদিক) বলে কি সবকিছু মেনে নেওয়া যায়। যায় না। আর যায় না, বলেই বিএনপি নেতা ড. আর এ গনির মৃত্যুর সংবাদ কভার করতে গিয়ে সাংবাদিকরা যা করলেন তা লিখছি। বলতে পারেন, বুকের ভেতরের যন্ত্রণার কারণেই লিখতে হচ্ছে। একবার কবরে নেমে পিটিসি দেওয়া নিয়ে অনেক হৈচৈ হয়েছে। কিন্তু আদৌ কি কোন বোধদয় হয়েছে আমাদের! আমারতো মনে হয় না।
স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ড. আর এ গনির মৃত্যুর খবর (রাত ১২.৩০) প্রচার হওয়ার সঙ্গে সেখানে আসতে শুরু করে মিডিয়া কর্মীরা। রাত ১ টার মধ্যেই হাজির হন জনা বিশেক সাংবাদিক। যার সিংগভাগেই টেলিভিশন সাংবাদিক।
রাত ১ টা বাজার ৫ মিনিট আগে গোসলের জন্য স্কয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেওয়া হয় আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতালে। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গোসল শেষে আবার লাশ আনা হবে স্কয়ারে। রাতে এখানেই মর্গে থাকবে মরদেহ। শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির বাসভবনে নেওয়া হবে। বাদ জুম্মা ধানমন্ডি ঈদগাহ মাঠ জামে মসজিদে জানাজা শেষে বনানীতে দাফন করা হবে।
মরদেহ আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতালে নেওয়া হলেও মিডিয়া কর্মীরা স্কয়ার ছাড়লেন না। বলা যায় ছাড়তে পারলেন না। কারণ অনেকেই মনে করছিলেন, আরএ গনিকে দেখতে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যে কেউ যে কোন সময় ছুটে আসতে পারেন। যদি শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের সেই আশায় ছাই চাপা পড়ে।
শেষ পর্যন্ত রাতে কোন নেতার দেখা মেলেনি স্কয়ারে। এমনকি রাতে কেউই বলতে পারলেন না, আরএ গনির মরদেহ বিএনপি অফিসে নেওয়া হবে কিনা, বা বিএনপি অফিসে কোন জানাজা হবে কিনা।
মরদেহ গোসল করাতে নেওয়ার পর সাংবাদিকরা অবস্থান নেন স্কয়ার হাসপাতালের সামনে প্রধান সড়কের (পান্থপথে) উপর। যেখানে দাঁড়িয়ে অনায়াসে ফলো করা যায় হাসপাতালে কে আসছেন, আর কে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় নানান রকম গালগল্প। এতে ঠাঁই পায় অনেকের ভ্রমণ কাহিনীও। কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে উচ্চস্বরে হাসির রোল। খানিকটা মাছ বাজারের মতো। প্রধান সড়ক থেকে হাসাপাতালের গেট কতটুকু দুরত্ব, বড়জোর ১৫ ফুট। আর সেই পনের ফুট দূরে দাড়িয়ে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
অশ্রুসিক্ত নয়ন বারবার মুছে নিচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। দিনের বেলা হলে হয়তো বিষয়টি এতোটা চোখে আটকাতো না। কিন্তু রাতের নিস্তব্ধতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন তোমরা যা করছো মনে হয় সঠিক হচ্ছে না। জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অপর এক রোগীর স্বজনতো প্রকাশ্যেই বলে বসলেন, এরা মানুষ নাকি। এদের কি কিছুই শেখায়নি কেউ। কোথায় গেলে কি করা যায়, আর কি করা যায় না।
একটি টিভির সিনিয়র সাংবাদিক খানিকটা পরে পড়িমড়ি করে হাজির হন সেখানে। প্রথম দফায় ফুটেজ পাননি বলে অবগত করেন জরুরি বিভাগের সামনে দাড়িয়ে থাকা এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে। গোসল শেষে মরদেহ স্কয়ারে আনার সময় তাকে ফুটেজ নেওয়ার জন্য একটু সময় করে দেওয়ার অনুরোধও করেন। ভদ্রলোকও মাথা নেড়ে তাকে হ্যাঁসূচক জবাব দেন।
অন্যান্য মিডিয়ার কর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নিলেও এই লেটকামার সাংবাদিক অবস্থান নেন হাসপাতালের মুল ফটকের পাশে দাড়িয়ে থাকা ওই স্বেচ্ছাসেবক দলনেতার পাশে। ওঐ নেতার পরিচয় পাওয়া গেলো তিনি আরএ গণির দূরসম্পর্কীয় আত্মীয় হন। বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে। বিএনপি বিটের ওই সাংবাদিক তার পূর্বপরিচিত। কিছুক্ষণের মধ্যেই আলাপ জমে ওঠে তাদের। এই আলাপে যোগদেন আরও একজন লেটকামার সাংবাদিক।
প্রায় মিনিট বিশেক পরে আরএ গনির দুই মেয়ে এবং নিকটাত্মীয়রা একে একে স্কয়ার হাসপাতাল ছাড়েন। কিন্তু মরদেহ ফেরার অপেক্ষায় থাকেন স্বেচ্ছা সেবক দলের ওই নেতা। এবার লেটকামার ওই টিভি সাংবাদিক হাসাপাতালের জরুরি বিভাগকে পেছনে রেখে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে শুরু করেন স্কয়ার। অন্যদের আহ্বান করলেন আসেন ‘রাতফি’ তুলি।
আর রাতফির ফ্রেমে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে নিতে আরও ঘনিষ্ট হয়ে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। কিন্তু অতিশয় বিনয়ী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা প্রথমে মৃদুস্বরে আপত্তি তোলেন। তাতে কোনই কাজ হলো না। পরে ওই সাংবাদিক নিজেই সরে এসে সেলফির ফ্রেম ঠিক করলেন। সঙ্গে দাঁত কেলাতেও ভুল করলেন না।
সেলফি তোলা শেষেই ফেসবুকে দিতে উদ্যত হলেন। বললেন আমি আপনার ফেসবুকে ট্যাগ করে দিচ্ছে। মেতে উঠলেন ফেসবুক নিয়ে। লেটকামার ওই সাংবাদিকের আলোচনায় বিষয়বস্তু দেখে মনটা বিষিয়ে উঠল। সাংবাদিকদের নীতি নৈতিকতা দেখে। সব কিছু কি বইতে পাওয়া যায়। কোন দিকে যাচ্ছি আমরা....।
এই লেখা কাউকে ছোট করা বা বড় করার জন্য নয়। সকলের মধ্যে বোধদয় জাগ্রত করা। সে কারণে কারোই নাম দেওয়া হলো না।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
এসআই/ওএইচ