ঢাকা: সরকারের অন্যতম শরিক এবং সংসদের প্রধানবিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে ক্ষমতার ভারসাম্য চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টির বর্তমান পরিস্থিতি ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বকে আওয়ামী লীগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
জাতীয় পার্টিতে এরশাদ এককভাবে ক্ষমতাধর হয়ে উঠলে সরকারের জন্য নতুন করে সংকট তৈরি হতে পারে। এরশাদের ওপর কোনোভাবেই পুরোপুরি আস্থা রাখার মতো কিছু নেই। সেই অবস্থানে এরশাদ নেই বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সকালে এক ধরনের কথা, বিকেলে আরেক ধরনের কথা কিংবা নতুন করে অন্য কথা বলাই এরশাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদকে নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরশাদ একবার নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলে আবার পিছুটান দেন। এভাবে চলতে-চলতে এক পর্যায়ে এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অনেক নাটকীয়তার জন্ম দেন। তখন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির বড় একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নিলে এরশাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা মাঠে মারা যায়।
এদিকে, এরশাদের জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছে সরকারে। সংসদের ৩৪টি আসন নিয়ে প্রধানবিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে দলটি। সংরক্ষিত মহিলা আসন রয়েছে ৬টি। এই অবস্থায় সরকার ও সংসদ থেকে জাতীয় পার্টি পদত্যাগ করলে সরকারের স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। এরশাদ এককভাবে ক্ষমতাধর হয়ে উঠলে এ ধরনের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন।
যদিও আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে রয়েছে। এ রকম কোনো পরিস্থিতি হলে সাংবিধানিকভাবে কোনো সংকটে পড়বে না সরকার। তবে সরকার বর্তমানে যে শক্ত অবস্থানের ওপর রয়েছে, তা অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়বে এবং দেশে-বিদেশে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হবে।
বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। বিএনপি শুধু বর্জনই নয় ওই নির্বাচন বানচালের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন ওই নির্বাচনে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগের পরে নির্বাচনের অন্যতম প্রধান শক্তি ছিলো জাতীয় পার্টি।
সরকারের অবস্থান শক্ত রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ভেতরে-বাইরে থেকে ভূমিকা পালন করে চলেছে। জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও দলটি দ্বিধাভিক্ত হয়ে পড়লে সরকার সংকটে পড়তে পারে বলে নীতি-নির্ধারকদের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদ থেকে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টির মধ্যে এ ধরনের সন্দেহ আঁচ করা যায় বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। জাতীয় পার্টিতে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু আওয়ামী লীগপন্থী বলে পরিচিত। তাছাড়া, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টিকে মহাজোটে আনার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন এই দুই নেতা। হঠাৎ করে বাবলুকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে ওই পদে আনা হয়। এটি এরশাদের একক ক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টির অ্যান্টি আওয়ামী লীগ লবি শক্তিশালী হয়ে উঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ জাতীয় পার্টির মিড লেভেল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মূলত অ্যান্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট ধারণ করেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থাকলেও এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাই জাতীয় পার্টির হঠাৎ এমন উল্টাপাল্টা অবস্থান নেওয়া তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
তাই জাতীয় পার্টির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে স্পষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৬
এসকে/টিআই
** যে কারণে এরশাদ একা!