ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা ও হিসাব-নিকাশ। কার্যনির্বাহী সংসদ (কেন্দ্রীয় কমিটি) থেকে কারা কারা বাদ পড়ছেন, নতুন কারা কারা ঢুকছেন? সাধারণ সম্পাদক পদে কি পরিবর্তন আসছে, নাকি বর্তমান সাধারণ সম্পাদকই বহাল থাকছেন?, রদবদল হলে কে হচ্ছেন দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক? এসব আলোচনা এখন নেতাকর্মীদের মুখে মুখে।
আগামী ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৯ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি।
আগামী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখে বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদল ও চমক থাকছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে।
সবচেয়ে বড় চমক আসতে পারে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার একজন তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের একটিতে আনা হতে পারে। বিগত মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগী এই নেতা আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও চালানো হচ্ছে।
সোহেল তাজ শনিবার(২৩ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সোহার্দ্যপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশে সোহেল তাজকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এছাড়াও এবারের সম্মেলনে আওয়ামী লীগে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে আলোচনা রয়েছে। বর্তমানে কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন এমন জায়গা থেকে কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন। আবার দলের তরুণদের মধ্য থেকে নতুন নেতৃত্ব আনা হতে পারে। দলের গঠনতন্ত্রেও কিছু সংশোধনী বা সংযোজন আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় দলের সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ পড়া বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আবার পদ (সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) ফিরে পেতে পারেন। সেই সঙ্গে বর্তমানে সভাপতিমণ্ডলীতে আছেন, এমন দুই একজন পদ হারাতে পারেন।
সম্মেলনকে সামনে রেখে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদ। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই পুনরায় এ পদে থাকছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে পরিবর্তিত হলে এ পদের জন্য আগ্রহী কয়েকজনের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। তারা সাধারণ সম্পাদক পদে যেতে তৎপরও হয়ে উঠেছেন। এ পদের জন্য নিজেদেরকে যোগ্য হিসেবে তুলে ধরতে তারা বিভিন্নভাবে সংগঠনের ভেতরে বাইরে তৎপর রয়েছেন।
সেক্ষেত্রে এ পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
সাধারণ সম্পাদকের সমমর্যাদায় দলে মুখপাত্রের পদ সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানা গেছে। এই মুখপাত্র যেন দলের হয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে পারেন সে ব্যবস্থাও রাখা হতে পারে।
বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে সম্পাদকমণ্ডলীতেও।
এখান থেকে বাদ পড়তে পারেন কেউ কেউ। বিশেষ করে বিগত সরকারের মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে যারা বর্তমান মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি, তাদের কারো কারো কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছিটকে পড়া বা গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে বাদ পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন।
পরিবর্তন আসতে পারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে। তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যারা আছেন, তাদের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমান সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্য থেকে দুই-তিনজন বাদ পড়তে পারেন। এসব পদে নতুন মুখ আসতে পারে। কারো কারো পদোন্নতি হতে পারে এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের কেউ কেউ এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন।
এদিকে আগামী সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে (কার্যনির্বাহী সংসদ) নতুন কিছু পদও সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে সাত বিভাগে একজন করে সাতটি সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণা হয়েছে, বিভাগ হতে যাচ্ছে ফরিদপুর ও কুমিল্লাও। নতুন এ তিন বিভাগের জন্য আরও তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বৃদ্ধি করে ১০টি করা হবে।
এছাড়া নতুন কিছু সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি (আইসিটি), প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ আর কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ। কিছু সম্পাদকীয় পদ ভেঙে আলাদা করা হতে পারে। এগুলোর মধ্যে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং কৃষি ও সমবায় সম্পাদক পদ ভেঙে দুইটি করে পদ সৃষ্টি করা হতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর- এ দু’টি শহরকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়েছে। নতুন তিন বিভাগ ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লাও বিভাগীয় শহর মহানগরের মর্যাদা পাবে। এ পাঁচ মহানগরের আলাদা কমিটি হলে সেগুলো সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পাবে। এর ফলে বর্তমান ৭৩ সাংগঠনিক জেলা বেড়ে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলায় উন্নীত হতে পারে।
আর এ পরিবর্তনগুলো আসবে বিগতদিনে নেতাদের কার্যক্রমের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে। সূত্র জানায়, পদে থাকা কোনো কোনো নেতা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তেমন তৎপর না থাকায় দলের সভাপতি তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। সংগঠনে সক্রিয় বা নিস্ক্রিয়তার বিষয়টির মূল্যায়নে পদে থাকা না থাকার ওপর নির্ভর করবে বলেও জানা গেছে।
** প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন সোহেল তাজ
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসকে/এএসআর