ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিলম্বের কারণ খুঁজছেন শীর্ষ নেতারা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
বিলম্বের কারণ খুঁজছেন শীর্ষ নেতারা

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা দলটির বর্ষীয়ান একনেতা সম্প্রতি তার আস্থাভাজন তরুণ এক নেতার কাছে জানতে চান ‘দেড়ি হচ্ছে কেন? তোমার পরিচিত ‘অমুক’ সাংবাদিকের কাছে নতুন কোনো খবর আছে নাকি?’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী নেতা সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ের এক কর্মকার্তাকে ফোন দিয়ে রসিকতার ছলে বলেন, ‘কবে নাগাদ কমিটি ঘোষণা করছো তোমরা? আমরা বেঁচে থাকা অবস্থায় কমিটি ঘোষণা হবে তো? নাকি মরলে ঘোষণা করবা?’

ছয় বছর পর ‍অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের একমাস পার হয়ে গেলেও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধ‍ারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা এখনও হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা, উত্তেজনা ও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

দলটির শীর্ষ নেতারা বিশেষ করে স্থায়ী কমিটির সম্ভাব্য সদস্যদের মধ্যে এই উত্তেজনা একটু বেশি। তারা বিলম্বের কারণ খুঁজছেন প্রতিনিয়ত।

সূত্র মতে, সহকর্মীদের ওপর আস্থা না থাকায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কমিটির বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গেই কিছু শেয়ার করছেন না। গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় বসে একা একা গঠন করছেন সব কমিটি।
 

গুলশানে প্রতি রাতে (সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে) অফিস করার সময় সঙ্গে নিয়ে আসা ফাইল কিছুতেই হাত ছাড়া করছেন না তিনি। সিনিয়র নেতা ও অফিস কর্মকর্তাদের সামনে খুলছেন না ওই ফাইল। ফলে কমিটি নিয়ে আগাম কোনো কিছু জানতে পারছেন কেউ। সবাই রয়েছেন অন্ধকারে। কৌতূহলে বিলম্বের কারণ খুঁজছেন তারা।
 

কাউন্সিলের পর এরই মধ্যে মহাসচিব, সিনিয়র ‍যুগ্মমহাসচিব, যুগ্মমহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৪০টির মতো পদ ঘোষণা করেছেন খালেদা জিয়া।
 

এই পদগুলো ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপির কোনো পর্যায়ের কোনো নেতা জানেত পারেননি কে কোন পদ পাচ্ছেন। এমনকি যারা পদ পেয়েছেন তারাও বিষয়টি জানতেন না। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার এই অতি গোপনীয়তা দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানার চেষ্টা করছেন, কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে কেন এত গোপনীয়তা রক্ষা করছেন দলের চেয়ারপারসন। কেনই বা বিলম্ব হচ্ছে কমিটি ঘোষণাতে।
 

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধাপে-ধাপে কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত থেকেই কাউন্সিলের ১১ দিনের মাথায় মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষ পদ ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। এরপর একে একে যুগ্মমহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ঘোষণা করেন তিনি। সর্বশেষ সোমবার (১৮ এপ্রিল) একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২০ জন সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদ ঘোষণা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
 
সূত্র মতে, জাতীয় কাউন্সিলের পর সবার আগে মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি। কারণ ১৯ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় স্থায়ী কমিটি নিয়ে খুব বেশি কাটা-ছেড়া করার প্রয়োজন হবে না। দু’টি শূন্যস্থান পূরণ অথবা ২/৩টি পদ পুনর্বিন্যাস করতে হবে তাকে।
 

সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর জায়গায় আব্দুল্লাহ আল নোমান, ড. আর এ গণির জায়াগায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নিয়োগ প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। আর পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে এম শামসুল ইসলামের স্থানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও সারোয়ারি রহমানের জায়গায় সেলিমা রহমানের নিয়োগও প্রায় চূড়ান্ত।

ফলে জাতীয় স্থায়ী কমিটি নিয়ে খুব বেশি মাথা ব্যথা নেই খালেদা জিয়ার। কিন্তু এ কমিটিতে জায়গা পেতে যাওয়া নেতাদের দুঃচিন্তার শেষ নেই। কারণ যে কোনো মুহূর্তে যে কারো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সোমবার (১৮ এপ্রিল) বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটি দিতে কেন বিলম্ব হচ্ছে, সেটা ম্যাডামই (খালেদা জিয়া) ভালো জানেন। হয়তো বা ধাপে ধাপে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চান তিনি। নির্বাহী কমিটিগুলো আগে দিয়ে পরে জাতীয় স্থায়ী কমিটি দেওয়ার চিন্তাও থাকতে পারে তার। যেহেতু কাউন্সিলরা ম্যাডামের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছে, সেহেতু এ নিয়ে খুব বেশি কৌতূহল দেখানোর কিছু নেই। উনি সময় মতো সব কমিটি দেবেন।
 

বাংলাদেশ সময়: ০৬০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
এজেড/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।