ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ইউপিতে ‘ভাতে মরা’ ধানের শীষ!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
ইউপিতে ‘ভাতে মরা’ ধানের শীষ!

ময়মনসিংহ: “দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন, কিন্তু সম্মান বা মূল্যায়ন কোনোটাই জোটেনি। এমন নেতাকে টিপ্পনি কেটে বলা হয় ‘ভাতে মরা।

’ চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিএনপি’র দলীয় প্রতীকের অবস্থাও এখন সেই নেতাদের মতোই। রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এ দলের জনপ্রিয়তা একেবারে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অন্তত ধানের শীষ চিহ্নিত হয়ে উঠেছে ‘ভাতে মরা’ প্রতীক হিসেবে!”

 

ময়মনসিংহের নান্দাইলের মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ দু’মাঠকর্মী রফিক ও সাইফুলের ঝাঁঝালো মন্তব্য এটি। তাদের আশঙ্কা, কেন্দ্রে সুবিধাভোগী ও ‘চালবাজদের’ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে ম্যাডাম না সরালে এ প্রতীক একদিন ‘মশাল’ প্রতীকে রূপ নিতে পারে। ’

মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জিতেছেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এ পরাজয়ের জন্য রফিক ও সাইফুল মূলত ভোটারদের কাছে সময়ের বিবর্তনে ধানের শীষ প্রতীকের আবেদন কমে যাওয়াকেই মোটাদাগে দায়ী করছেন।

শুধু এ ইউনিয়নেই নয়, বাদ বাকি সাতটি ইউনিয়নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়মাল্য পড়েছেন। এখানকার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র একটিতে চেয়ারম্যান পেয়েছে সংসদের বাইরে থাকা এ দলটি।

এর চেয়েও বিপর্যস্ত অবস্থা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে। সেখানে আওয়ামী লীগ আটটি ইউপিতে জয়ী হলেও একটিতেও জিততে পারেনি বিএনপির প্রার্থীরা।

জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইলে ইউপি নির্বাচনে এমন ভরাডুবির বিপরীতে প্রথম ধাপে ফুলপুরে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছিল সমানে সমান।

এখানে নির্বাচনের ফলাফল আ’লীগ ৪ ও বিএনপি ৪। যদিও গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত গৌরীপুর ও তারাকান্দার ২০ ইউনিয়নের নির্বাচনে অবশ্য শোচনীয় হারা হেরেছে বিএনপি।

সেখানে ২০ ইউনিয়নের ফলাফলে ১৯টিতেই জিতেছেন আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহীরা। বিপরীতে মাত্র একটি ইউপিতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী কোনোমতে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পেরেছেন।

এ অবস্থায় বিপর্যস্ত দলটির তৃণমূলেও নেমে এসেছে পুরোপুরি হতাশা। মাঠের কর্মীদের ভাষ্যে, অন্ধকার রাজনীতির পথে হেঁটে কেন্দ্রের ভুলে দু’দফা সরকার পতন আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও এ আন্দোলনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই ছিলেন প্রাণশক্তি।

ক্ষমতা, সংসদ ও বিরোধীদল-একে একে এসব হারানোর পর মনোবলে ধাক্কা লাগা তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকিয়ে ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিকে।

কিন্তু এখানেও নৌকার সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীক মুখ থুবড়ে পড়ায় আবারও হতাশার অনলে পুড়ছেন তারা।

তৃণমূলেও ভোট রাজনীতিতে দলটির পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সামনের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও তাদের জন্য অশনি সংকেত হয়ে অপেক্ষা করছে বলে মনে করেন অনেকেই।

দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও এক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যতিক্রম ছিল ময়মনসিংহের এসব উপজেলা। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বিঘ্নেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন।

পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত নারী ভোটাররা। সুষ্ঠু ভোট হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সুরে এখানে কথা বলতে পারেননি দলটির কোনো পর্যায়েরই নেতা।  

ঢাকার নেতারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ইউপি নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র দাপট, নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ ও ফলাফল ছিনতাইয়ের নানা অভিযোগ করলেও মূলত গুটিকয়েক সেই কেন্দ্রীয় নেতার মনোনয়ন বাণিজ্যই আসলে ডুবিয়েছে দলকে, এমন অভিযোগ উঠেছে দলটির তৃণমূল থেকে।  

তাদের ভুলের কারণেই একাধিক ইউপিতে ছিল দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে ব্যালটের লড়াইয়ে রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে ধানের শীষ প্রতীককে।

নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জের ইউনিয়নসমূহে শোচনীয় পরাজয়ের জন্য রাজনীতি সচেতন স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ভোটারদের মনোভাবকেই দায়ী করেন।

ধানের শীষ প্রতীক কেন হালে পানি পাচ্ছে না, এ নিয়েই নান্দাইলের দত্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সন্নিকটে একটি চা স্টলে বসে আলাপ হচ্ছিল বেশ কয়েকজনের সঙ্গে।

তাদের মধ্যে একজন কলেজপড়ুয়া তরুণ দিদারুল ইসলাম (২৪) বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে থাকেন, ‘পাবলিক এখন অনেক সচেতন। সবাই বুঝেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করতে না পারলে এলাকায় উন্নয়ন হবে না। বিএনপির প্রার্থীর দ্বারা উন্নয়ন সম্ভব হবে না। ফলে নৌকার জোয়ার উঠেছে আর ধানের শীষ ডুবেছে। ’

ওই কলেজ ছাত্রের মতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন অনেকেই।

তবে ময়মনসিংহের ৫ উপজেলার ৫২ ইউনিয়নে বিএনপির ভরাডুবি ঘটলেও ভোটারদের কাছে ধানের শীষ প্রতীকের আবেদন মোটেও কমেনি বলে মনে করেন দলের উত্তর জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা কাড়িকাড়ি টাকা নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। তারা সঠিক প্রার্থী দিতে না পারায় বেশিরভাগ ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এতে করে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৬
এমএএএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।