ময়মনসিংহ : প্রায় এক যুগ পর ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকালে নগরীর ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে এ সম্মেলন হবে।
এ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দলীয় নেতা-কর্মীদের।
এ সম্মেলনকে ঘিরে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে নানা সমীকরণ। মাত্র চারটি পদের বিপরীতে রয়েছেন প্রায় এক ডজন পদ-প্রত্যাশী। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নেতৃত্ব বাছাই করা হবে।
এ সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ঘোষণা করবেন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ফলে কারা নেতৃত্ব পাচ্ছেন কিংবা কারা ছিটকে পড়ছেন জটিল এ সমীকরণ মেলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে দলের নেতা-কর্মীদের। একেক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা নগরীতে নিজেদের প্রার্থীর অনুকূলে নানা রকম আওয়াজ দিচ্ছেন। গুঞ্জণ ছড়াচ্ছেন। এজন্য ব্যবহার করছেন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।
অনুসারীরা তাদের নিজেদের পছন্দমতো নেতাকে পছন্দের পদে বসাতে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরাও। ফলে শেষ পর্যন্ত এ দু’ কমিটিতে নেতৃত্ব পরিবর্তন হবে, না কী নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে এমন হিসাব-নিকাশও চলছে অন্দরে-বাইরে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক ও ভোট রাজনীতিতে ময়মনসিংহ আ’লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। লড়াই-সংগ্রাম আর আন্দোলনে ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের রয়েছে বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস। কিন্তু হাল সময়ে গ্রুপিং-কোন্দলে নড়বড়ে হয়ে উঠেছে দলটির সাংগঠনিক শক্তি। আর এর প্রভাব পড়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনেও।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে দু’ নেতার নাম উচ্চারিত হচ্ছে বেশি। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান এবং জেলা আ’লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা।
সূত্র মতে, প্রায় এক যুগ যাবত সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। প্রবীণ এ রাজনীতিকের বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ত্যাগ-তিতীক্ষা আর অভিজ্ঞতার বিচারে দলের নেতা-কর্মীদের অনেকেই মনে করেন ৩০ এপ্রিলের সম্মেলনে তিনি পুনরায় এ পদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
আবার জেলা আওয়ামী লীগের এ পদে নেতা-কর্মীরা চান পরিবর্তন। তাদের ভাষ্যে, দলীয় রাজনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনতে বিকল্প কাউকে এ পদে দায়িত্ব দেয়া সময়ের দাবি। আর সেই কান্ডারি হতে পারেন আরেক প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা।
প্রায় ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এ নেতার। দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের এ শিষ্য এগিয়ে রয়েছেন নেতৃত্ব দৌড়ে।
গত কমিটিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন সরকার। এবার তিনি আর এ পদে প্রার্থী হননি।
তবে সাধারণ সম্পাদক পদে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ, বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল আলম, জেলা আ’লীগ সদস্য অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, কেন্দ্রীয় আ’লীগের সহ-সম্পাদক শরীফ হাসান অনু, তরুণ দু’সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ ও আনোয়ারুল আবেদিন।
তবে দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন তুহিনের হঠাৎ প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে কানাঘুষা। কেউ কেউ বলছেন, মহল বিশেষের বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট বাস্তবায়ন করতেই এ এমপি ‘ডামি’ প্রার্থী হয়েছেন। নিজের নান্দাইল উপজেলা কমিটি এখনো বৈধতা না পেলেও জেলার দায়িত্বশীল পদে তার হঠাৎ প্রার্থী হওয়াকেও আবার গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেউ কেউ।
মহানগর আওয়ামী লীগে তারুণ্য নির্ভর নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে বলে আলোচনা জমে উঠেছে। তারুণ্যের পছন্দ হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
দলীয় সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হবার পর ইকরামুল হক টিটু আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন, জনবান্ধব শহর হিসেবে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে গড়ে তুলেছেন। নগরীর তরুণদের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সোচ্চার মেয়র টিটু। তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে আওয়ামী রাজনীতির একটি বলয়।
তার সমর্থকরা তাকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবেই ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। জনপ্রত্যাশারও পুরোটা জুড়ে রয়েছেন মেয়র টিটু।
আরেক নেতা মোহিত উর রহমান শান্ত’র প্রতিও সমর্থন রয়েছে তরুণদের। দলের আন্দোলন-সংগ্রামেও ছিল তার বলিষ্ঠ ভূমিকা। মাঝখানে রাজনীতি থেকে খানিকটা দূরে থাকলেও অস্তিত্বের প্রশ্নে তিনি ফের সরব হয়ে উঠেন। তাকে নিয়ে তার বলয়ের তরুণদেরও আকাঙ্খার শেষ নেই।
এ তরুণ দু’ নেতার বাইরেও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পুনরায় পেতে চান শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী আনিমুল ইসলাম তারা ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মিল্কী টজু। তারা দু’জনেই এবার মহানগর আ’লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়েছেন।
সূত্র জানায়, দলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই জেলা ও মহানগর আ’লীগে নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখা যেতে পারে এ প্রশ্নে মতামত দিতেও গলদঘর্ম হতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের।
এখন নতুন কমিটি ও নেতৃত্বের প্রত্যাশায় দলটির নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও তাকিয়ে নতুন কমিটির দিকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৬
এমএএএম/জেডএম
** সাড়ে ৬ ফুট উচ্চতার মঞ্চ প্রস্তুত, পালা সাজসজ্জার