ঢাকা: বহু চড়াই-উতরাই ও সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে ৬৮ বছরে পা দিলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটির বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হলো।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) গৌরবোজ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী।
পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার কে এন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দলটি। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল নেতা-কর্মীরা সেখানে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠার প্রায় চার বছর পর ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামে বাঙালির লড়াই সংগ্রামের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ এ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠা পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ।
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো দিকপাল নেতাদের সঙ্গে মুসলিম লীগের দূরত্ব, উদীয়মান তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহকর্মীদের দ্রোহ ও সাহসী পদক্ষেপ ঐতিহাসিক পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়।
প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক।
এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ সালের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তিনি নেতৃত্ব পান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রাম, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর ৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ সময় দেশে একের পর এক সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ঐহিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দল।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মানুষ বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৬ই ডিসেম্বর সশন্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি, চড়াই-উতরাই ও ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এর পর দলের মধ্যে একাধিক ভাঙন, গ্রুপিং ও বহু ধারায় বিভক্তি আসে। দলের ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ ফের ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। এই সময়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি তিন বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগ।
তবে ৬৭ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই আওয়ামী লীগকে থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা বেশি দিন টেকেনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছর এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৫ বছর এবং বর্তমানে সাড়ে ৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ/