ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপির গুম ইস্যু এখন ‘নিখোঁজ’!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
বিএনপির গুম ইস্যু এখন ‘নিখোঁজ’!

ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর বিএনপির গুম ইস্যু পরিণত হয়েছে ‘নিখোঁজ’ ইস্যুতে। ২০১৩ সাল থেকে সরকারবিরোধী সব আন্দোলন ও কর্মসূচিতে বিএনপির অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল এটি।

 

কিন্তু গুলশান হামলার পর ‘গুম ইস্যু’ ডাইভার্ট হয়ে ‘নিখোঁজ ইস্যুতে’ পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৩ সালের শেষের দিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র ও যুবদলের বেশ কিছু নেতাকর্মীর ‘নিখোঁজের’ অভিযোগ তোলে দলটি। ওই সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু তরুণ নিখোঁজ হন। তাদের সবাইকে দলীয় কর্মী দাবি করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচারণাও চালায় বিএনপি।
 
কিছু মানবাধিকার সংগঠনও বিএনপির দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ‘গুম ইস্যু’ সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে অন্যতম ইস্যু হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালায়। জামায়াতের আন্তর্জাতিক উইংস হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকর লংঘন ও গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করে।
 
সূত্রমতে, বিরোধীপক্ষের এ প্রচারণাকে প্রকাশ্যে কোনো পাত্তা না দিলেও ভেতরে ভেতরে বিব্রত ছিল সরকার। কারণ, অনেক অর্জনের পরও এই ‘গুম ইস্যু’তে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারকে বার বার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
 
কিন্ত গত ০১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। কারণ, ওই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের সবাই ছিলেন নিখোঁজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবার থেকে রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যাওয়া তরুণরাই জঙ্গি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
 
গত দুই সপ্তাহের অনুসন্ধানে ঢাকার ২৭ জন এবং ঢাকার বাইরের ২৮ জনের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ তালিকায় থাকা কয়েকজন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে মো. আশিকুর রহমান সিরিয়ায়, নিবরাস ও মীর মোবাশ্বের গুলশানের হলি আর্টিজানে নিহত হয়েছেন। আরেকজন গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিম মাদারীপুর কলেজ শিক্ষক হত্যাচেষ্টায় আটক ও পরে ক্রসফায়ারে নিহত হন।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিএনপির এখন উচিত নিখোঁজ তরুণদের তালিকার সঙ্গে দলের গুম হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা মিলিয়ে দেখা। এমনও হতে পারে, বিএনপির দৃষ্টিতে যারা ‘গুম’, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে তারা ‘নিখোঁজ’। যাদের অনেকেই এখন জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত’।
 
কেউ কেউ বলছেন, ঘটনা যাই ঘটুক- এতোদিন সব ধরনের নিখোঁজের ঘটনাকে ‘গুম’ হিসেবে প্রচার করলেও এখন আর সেই সুযোগ পাবে না বিএনপি। হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়া হত্যাযজ্ঞের পর গুম ইস্যুর ঢালাও প্রচার বন্ধ করতে হবে দলটিকে।
 
তবে দলটির নেতারা বলছেন, নিখোঁজ হওয়া তরুণদের কেউ কেউ জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন- বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা বিশ্বাযোগ্য হলেও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, কুমিল্লার লাকসামের সাবেক সংসদ সদস্য হিরু এবং ছাত্র ও যুবদলের অসংখ্য বয়স্ক নেতাদের নিখোঁজের বিষয়টি এ ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না।  
 
গুম ইস্যুতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করা ইয়ুথ মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে নিখোঁজের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী নেই। তাছাড়া আমরা যাদেরকে গুম বলছি, তারা সবাই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, ছাত্রদল, যুবদল করতেন। এখন পর্যন্ত যাদের তথ্য পুলিশ সংগ্রহ করেছে, তাদের মধ্যে ছাত্রদল-যুবদলের কেউ নেই। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।