সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শাবানার সাক্ষাৎ, পরে শ্বশুরবাড়িতে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চিত্র প্রযোজক স্বামী ওয়াহিদ সাদেকের নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের ইচ্ছার কথা প্রকাশ পায় শাবানার মুখে। এতে যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়।
শ্বশুরবাড়িতে একইমঞ্চে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের উপস্থিতিতে শাবানা ও ওয়াহিদ সাদেকের বক্তব্যে ভোটের রাজনীতিতে আসার ইচ্ছাপোষণ করলে দ্রুতই খবরটি মিডিয়ার বদৌলতে কেশবপুর ছাড়িয়ে গোটা দেশব্যাপী চমক সৃষ্টি করে।
কেশবপুরের গ্রামগঞ্জের চা দোকানগুলোতে চলছে শাবানার স্বামীকে নিয়ে নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সাধারণ মানুষ।
ওয়াহিদ সাদেকের মনোনয়নের ব্যাপারে শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগনাল’ আছে এমন প্রচারণা আসনটির আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আধা ডজন নেতাকে বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
এমনকি, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ হতাশার সুরে বাংলানিউজকে বললেন, বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে আমাদের অপরিচিত ব্যক্তিদের নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন; মুখ নয় প্রতীক দেখে আমরা তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে এমপি বানিয়েছি। নেত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের ভোটের মূল্যায়ন করে তাদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ বানিয়েছেন। কিন্তু একমাত্র সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক ব্যতীত অন্য কেউ কেশবপুরের জনগণের কথা মনে রাখেননি, যাদের নেতৃত্বে নির্বাচন করে ওই চেয়ারে তাদেরকেও ভুলে গেছেন।
ফলে কেশবপুরবাসীর সময়ের দাবি, যে নেতা কেশবপুরের মানুষকে চেনেন, জানেন, যিনি সুখে-দুঃখে কেশবপুরবাসীর পাশে ছিলেন এবং থাকবেন তেমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
যশোর-৬ (কেশবপুর) সংসদীয় আসনে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে চিত্রনায়িকা শাবানার ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দুই দফায় এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৯৬-২০০০ সালে এএসএইচকে সাদেক শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে উপজেলার ১৪৪টি গ্রামে রাস্তা পাকাকরণ, বিদ্যুৎ, ব্রিজ-কালভার্টসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শত শত শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে। আমলা থেকে রাজনীতিতে এসে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারকে মাড়িয়ে অল্প দিনেই তিনি কেশবপুরের আপামর জনগণের আস্থা অর্জন করেন বলেই ২০০০ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলেও তিনি নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সে সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও তৃণমূলের কর্মীদেরও তিনি মূল্যায়ন করেছেন, খোঁজ রেখেছেন। ফলে সাদেক পরিবারের প্রতি দুর্বল কেশবপুরবাসী।
এই প্রেক্ষিতে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এএসএইচকে সাদেক পত্নী ইসমাত আরা সাদেক নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেলে তাকে বরণ করে নেয় কেশবপুরবাসী।
তিনি নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে প্রাধান্য না দেওয়ায় গ্রুপিং-লবিংসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন কেশবপুরে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা গত দুই বছর ধরে দলীয় ফোরামের আলোচনায় বলে আসছেন, আগামী নির্বাচনে স্থানীয় কোনো নেতাকে এমপি বানাতে চাই, এটা তাদের প্রাণের দাবিতে রূপ নেয়।
ইতোমধ্যে সাদেক পরিবারের আরেক সদস্য ওয়াহিদ সাদেকের রাজনীতিতে আসার খবরে নতুন চমক সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এএটি/এমজেএফ