ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

২১ বছর ক্ষমতায় থেকে কেন দেশের উন্নতি করতে পারেনি?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
২১ বছর ক্ষমতায় থেকে কেন দেশের উন্নতি করতে পারেনি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা ২৮ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেন দেশের উন্নতি করতে পারে নাই, ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে পারেন নাই।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখনই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাকে হত্যা করা হয়।

আমাদের লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়া। আমি জাতির পিতার কাছে ওয়াদা করে বলতে চাই, বাংলাদেশকে ক্ষুদামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।

২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়ে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। এই ওয়াদা আমি জাতির পিতার কাছে দিয়ে যাচ্ছি।

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা ও অগ্রগতিকে তরান্বিত করতে দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ সমর্থন চেয়ে বলেন, মাত্র ৯ বছর ক্ষমতায় থেকে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্বে  বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু আমার প্রশ্ন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মধ্যে দীর্ঘ ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কেন দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি, সারাবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি কেন উন্নত করতে পারেনি। কারণ তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাদের হৃদয়ে পেয়ারে পাকিস্তান, পাকিস্তানেরর গোলামী করাই তাদের পছন্দ ছিল। বাংলাদেশ উন্নত ও স্বাবলম্বী হোক তা তারা কোনদিনই চায়নি।
 
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রকে ভুলুণ্ঠিত করে। বলার চেষ্টা করা হয় জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। জেনারেল জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র মানে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন, ক্ষমতায়ন, ভোটের ও রাজনীতির অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। কারাগারে বন্দী যুদ্ধাপরাধীদের মার্শাল অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে মুক্তি দিয়ে রাজনীতি করার অধিকারই ছিল জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্রের নমুনা। এটা জনগণের গণতন্ত্র ছিলো না, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী, খুনিদের গণতন্ত্র। আর প্রতি রাতে কার্ফিউ দেওয়া।
 
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর বাংলাদেশের বিজয়, স্বাধীনতার পূর্ণতা আসে। এ সময় তিনি আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে বন্দী করার পর দীর্ঘ ৯ মাস আমরা জানতাম না তিনি বেঁচে আছেন কি না। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর আমাদের পরিবারের সবাইকে বন্দী করে রাখা হয়। পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু যখন প্রথম লন্ডনে যান, তখন জানতে পারি তিনি বেঁচে আছেন। তখন আমাদের অবস্থা কি ছিলো তা বলার মতো না। ববঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে যখন আমাদের ফোন করেছিলেন তখন আমাদের কথা বলার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। শুধু আমাদের অপেক্ষা ছিল কখন ফিরে আসবেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়াই আমাদের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে  যাচ্ছে। উন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর ঐকান্তিক সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ক্ষমতা দখল করে খুনি মোশতাক ও জেনারেল জিয়ারা। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছে। তাকে হত্যা করা হবে এটা তিনি কখনও ভাবতেই পারতেন না। তবে বঙ্গবন্ধুই বলেছিলেন- বাংলাদেশের মাটি খুব উর্বর। উর্বর মাটিতে গাছ-পালার সঙ্গে কিছু আগাছাও জন্ম নেয়। তেমনি খুনি মোশতাকের মতো গাদ্দারের জন্ম হয়েছিল এদেশের মাটিতে।
 
আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে মারার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে আগুন দিয়ে কেউ পুড়িয়ে মারতে পারে, এটা ভাবা যায় না। পাকিস্তানি হানাদাররা এদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, সারাদেশের গ্রামগঞ্জ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। মানুষ পুড়িয়ে মেরেছিলো।

পাকিস্তানি হানাদাররা একাত্তরে যেভাবে গণহত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও চালিয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট ঠিক একই কায়দায় আন্দোলনের নামে ১৩, ১৪, ১৫ সালে নির্বিচারে মানুষকে পুড়িয়ে মারে। খালেদা জিয়া সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবো না বলে ঘোষণা গিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে।  

এ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়র মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মারুফা আকতার পপি, উপাধ্যক্ষ রেমন আরেং, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এসকে/এসএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।