ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘বলতে পারি না, নির্বাচনে না এলে ধরে জেলে নেবো’

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৮
‘বলতে পারি না, নির্বাচনে না এলে ধরে জেলে নেবো’ বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনও দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্র। কেউ না এলে তো বলতে পারি না, ধরে জেলে নেবো।

বুধবার (২ মে) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কোন পার্টি নির্বাচন করবে আর কোন পার্টি করবে না, সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। একজনের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর আমরা তো আর চাপিয়ে দিতে পারি না যে, তোমাদের নির্বাচন করতেই হবে। যে তোমাদের নির্বাচন করতে হবে, না করলে তোমাদের ধরে নিয়ে যাবো জেলে। এটা বলবো? না কী বলবো?’

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া বিএনপির নিজেদের ব্যাপার মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা পুরোপুরি তাদের ওপর নির্ভর করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা আসেনি, নির্বাচন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে। প্রায় তিন হাজারের ওপর মানুষকে হত্যাই করেছে। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পুনরায় জয়ের বিষয়টা জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে জেতাটা আমি জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। জনগণ যদি মনে করে যে তাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকুক, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।

‘আমরা আবারও ক্ষমতায় আসবো। উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে বাংলাদেশ, মধ্যম আয়ের দেশ হবেই, উন্নত দেশ হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। ’

আরও পড়ুন
** রাস্তা-চালক-মন্ত্রীর দোষ না দিয়ে নিয়ম মানুন
** এখন আর কোটার দরকার নেই

** সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেককে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবো
** সমঝোতা হলে প্রেস রিলিজেই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ঘোষণা
** লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড নারীদের উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী
** কমনওয়েলথ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসা কূটনৈতিক সাফল্য


দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির এত বড় বড় আইনজীবী। কত বড় বড় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী। তারা কিছুতেই খালেদা জিয়াকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি। কোর্ট রায় দিয়েছে, এখানে আমাদের কাছে দাবি করে কী লাভ?

‘একটা মামলা ১০ বছর ধরে চলেছে। ১৫২ বার না ১৫৪ বার সময় নিয়েছে। তিন বার কোর্ট বদল হয়েছে। ২২ বার রিট হয়েছে। আমাদের কী করার আছে!’

কোটার আর দরকার নেই
কোটা সংস্কার বিষয়ক অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্ররা কোটা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে এখন প্রশ্নের দরকার কী?

তিনি বলেন, কোটা সংস্কার ছাত্রদের বিষয় নয়। এটা সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্ররা কোটা চায় না। আমি দাবি মেনে নিয়েছি। এখানে ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ পরবর্তীতে জেলা কোটা না থাকার কারণে সরকারি চাকরি না পেয়ে চাইলেও পাবে না ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনে যারা ছিল, তাদের ছবি-টবি সংরক্ষণ করা আছে। ওই জেলার কারা কারা আন্দোলনে ছিল, সেটিও আমরা দেখবো। তারপর যদি এসে কান্নাকাটি করে, আমাদের কিছু করার থাকবে না।

সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল সংসদে বক্তৃতাকালে কোটা বাতিলের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হতাশ।

সমঝোতা হলে প্রেস রিলিজেই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ঘোষণা
ক্ষমতাসীনদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের আসন্ন সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি সমঝোতা হয়, যেভাবে হওয়ার সেভাবেই হবে। নিয়ম অনুযায়ীই প্রার্থীদের আবেদন নেওয়া হয়েছে। তালিকায় আসা আগ্রহীদের ডেকে প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়, সেটা হয়ে গেলে সেভাবে (প্রেস রিলিজে ঘোষণা) হবে। এতে সফল না হলে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট হবে।

এবার নির্বাচন নয়, ‘সিলেকশন’র মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সিন্ডিকেটের নির্বাচনের মাধ্যমে যেন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ‘অন্য’ কারও হাতে না যায়, সেজন্য এবার ‘সিলেকশন’ হতে পারে বলেও খবর দিচ্ছে বিভিন্ন সূত্র। প্রধানমন্ত্রীর কথায় সে বিষয়টিই আরও জোরালো হলো।

তারেককে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবে সরকার
একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রত্যয়ও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

লন্ডনে অবস্থানরত তারেকের বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিয়ে দেওয়া এবং তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা অনেক দেশ থেকে এ ধরনের আসামি নিয়ে আসি। সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেকের বিষয়েও ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। নিশ্চয়ই আমরা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।

তারেককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করায় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা চেয়ারপারসন করলো। বিএনপি নাকি সবচেয়ে বড়, জনপ্রিয় দল, তাদের দলে কি একজন যোগ্য লোকও নেই? এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা চেয়ারপারসন করে? এ ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়া দল আর নেই।

রাস্তা-চালক-মন্ত্রীর দোষ না দিয়ে নিয়ম মানুন
প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়িচালক বা মন্ত্রীকে দোষ না দিয়ে পথচারী-যাত্রীদেরও ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলার তাগিদ দেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপরও জোর দিতে বলেন সংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি রাজধানীর রাস্তায় রাজীব হোসেন নামে এক কলেজশিক্ষার্থী দুই বাসের চাপায় হাত হারিয়ে এবং রোজিনা আক্তার রোজী নামে এক গৃহকর্মী আরেক বাসের চাপায় পা হারিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া ফার্মগেট বাস স্টপেজে এক নারী এবং যাত্রাবাড়ীতে এক প্রাইভেটকার চালক গাড়ির চাপায় পা হারান। গুলিস্তানে বাসের চাপায় একটি পায়ের চার আঙুল পিষে যায় এক ব্যবসায়ীরও।

সরকারপ্রধান বলেন, দুর্ঘটনাগুলো যখন ঘটে। তখন আপনারা এটা কখনো হিসেবে করে দেখেছেন, এই ঘটনা ঘটার জন্য যে পথযাত্রী, তার কতটুকু ভুল আছে? সে কতটুকু দায়ী আর যে চালক, তার কতটুকু দায়? এটা কিন্তু কখনও বিবেচনা করেন না। সবাই চালকের শাস্তি চাইছেন।

‘খুব ভালো কথা। চালক বেপোরোয়া অথবা চালক ঠিক মতো চালাচ্ছে না তার জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। এটাও যেমন সত্য, আবার এটা তো সত্য যে রাস্তায় চলার কতগুলো নিয়ম আছে। কিন্তু সেই নিয়মটা আমরা কতটুকু মানি?’

শেখ হাসিনা বলেন, দোষ কার রাস্তার দোষ, দোষ কার সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর দোষ, দোষ কার ড্রাইভারের দোষ। কিন্তু নিয়ম যে মানে না সেটা আর কেউ খেয়াল করে না।

প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তার সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রাপ্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। লন্ডনে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রশংসা হয়েছে, সম্মেলনের ঘোষণায় রোহিঙ্গা বিষয়ক অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে। যেটা আমাদের সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করি। এ সফরে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী তার অস্ট্রেলিয়া সফরে গ্লোবাল সামিট অন উইমেনে প্রাপ্ত ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দেশের নারী সমাজের প্রতি উৎসর্গ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৮
এমইউএম/এসকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।