ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ঐক্যবদ্ধ হোন, বিজয় আমাদের অনিবার্য: ড. কামাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৮
ঐক্যবদ্ধ হোন, বিজয় আমাদের অনিবার্য: ড. কামাল সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ড. কামাল হোসেন

সিলেট: স্বৈরাচারের প্রজা থেকে মুক্ত হতে জনগণকে আহবান জানিয়ে সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, স্বাধীন দেশের মালিক হলো জনগণ। জনগণ মালিক না থাকলে প্রকৃত অর্থে আমরা স্বাধীন থাকি না।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারের প্রজা থেকে মুক্ত হতে হলে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল- জনগণ ক্ষমতার মালিক; তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা আবার মালিক হবো।

এই রাষ্ট্র আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনবো।

বুধবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য এখনও উপেক্ষিত। সার্বিক উন্নতি, সবার মধ্যে সমতার উন্নয়ন উপেক্ষিত। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান থেকে মানুষ বঞ্চিত। খালি বলা হয় উন্নয়ন, উন্নয়ন... কার উন্নয়ন? সব মানুষের উন্নয়ন না, কতিপয় মানুষের উন্নয়ন! যারা টাকা পুঁজি পাচার করে তাদের উন্নয়ন। কাদের উন্নয়ন? মুষ্টিমেয় মানুষ; যারা আমাদের ভোট থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে, তাদের উন্নয়ন। সেটা উন্নয়ন নয়। আমরা চাই, ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। সেই সত্যিকার উন্নয়নের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।

ড. কামাল বলেন, আমরা বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছি তখনই বিজয়ী হয়েছি। এটা মনে রাখবেন। বিজয়কে সামনে রেখে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ইনশাল্লাহ ক্ষমতার মালিক আমরা হব। আশা দিতে চাই, ঐক্যবদ্ধ হোন, বিজয় আমাদের অনিবার্য।

তিনি বলেন, আমরা সাত দফা দিয়েছি, এটা আপনাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে, আপনারা মনোযোগ সহকারে দেখবেন। দেখার পরে গ্রামে-গ্রামে, ইউনিয়নে-ইউনিয়নে, থানায়-থানায়, উপজেলায়, জেলায় এই ঐক্যকে আরও সুসংহত করতে হবে।
সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের ইতিহাস রচিত হচ্ছে শাহজালালের পূণ্যভূমি থেকে।  

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। সংসদ বাতিল করুন।  নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করুন। ইভিএম দেওয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করবেন? সেটা আর করতে দেওয়া হবে না। সেনা মোতায়েন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা, বাংলাদেশকে একটি কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র হিসেবে নির্মাণ করা। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আজকে সিলেটের মানুষ যেভাবে শত বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে ছুটে এসেছে জনসভায়, তারা প্রমাণ করেছে যে, এদেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরে চায়। আমি সিলেটের জনগণকে অভিবাদন জানাই।

জনগণের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আপনারা হাত তুলে দেখান আপনারা এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, ত্যাগস্বীকার করতে প্রস্তুত আছেন।  

উপস্থিত জনতা হাত তোলার পর মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমাদের অধিকারকে ফিরিয়ে আনবো ইনশাল্লাহ।

জেসডির কেন্দ্রীয় সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। জনগণকে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। সরকার উস্কানি দেবে, তাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে হবে। আরেকবার গায়ে হাত দিলে সবাই রাস্তায় নামব। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, ভোটের লড়াই, সুষ্ঠু নির্বাচনের লড়াই। এ লড়াইয়ে আমাদের বিজয়ী হতে হবে।

সমাবেশে ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ৪০টি উপজেলা নিয়ে আধ্যাত্মিক বিভাগ সিলেট। আগামী দিনে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পূণ্যভূমি সিলেটের এই মাঠ থেকে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় মুরব্বি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো।
সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুলনাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বিচার হয়নি। অথচ আমাকে দেওয়া হয়েছে কারাদণ্ড! আমাদের দাবি মানেন, যদি না মানেন তবে কিভাবে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে তা আমরা জানি।

তিনি আরো বলেন, সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকারের জন্য আমরা লড়াইয়ে নেমেছি। একদিকে শেখ হাসিনা থাকবে অন্যদিকে সারা দেশ।

সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জোয়ারে সরকার টালমাটাল। উন্নয়নের জোয়ারে সরকারের চোখে ছানি পড়ে গেছে!

তিনি আরো বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর বনানী কবরস্থানে গিয়ে ’৭৫ এর শহীদদের কবর জিয়ারত করে সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে চাই। সেখান থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। এটা আমার প্রস্তাব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকারের সময়ে দেশে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। এগুলোর বিচার করতে হবে। ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি দুর্নীতির বিচার হবে।  

মওদুদ আরো বলেন, স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতেই আজ ঐক্য করতে হয়েছে। সরকারকে সংলাপে আসতে হবে। নয়তো বুঝতে হবে, এই সরকার গণতন্ত্র চায় না। তারা সম্পদ পাচার করেছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, দেশে এখন গণতন্ত্র মৃত, মানবাধিকার-সুশাসন নেই। সরকার বলছে লাখ-লাখ, হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করেছে। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এত ভয় কেন?

তিনি আরো বলেন, আমরা রাজপথে নেমেছি, খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে ঘরে ফিরে যাব না। সারাদেশের মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে এক হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগকে একঘরে করে দেব।
সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে আসা জনতাগণফোরামের জাতীয় নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘রাবিশ’ মন্ত্রী বাংলাদেশকে ফতুর করে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বিনাভোটে নির্বাচন করেছেন, জাতি আপনাকে ক্ষমা করবে না। বর্তমান সরকার ফিটনেসবিহীন। এই সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে।

জেএসডির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, শাহজালাল (র.) শাহ পরান (র.) পরাজিত হননি। আমরাও পরাজিত হবো না। রাজনৈতিক অধিকার চাই। নির্বাচনকালীন সরকার চাই। শেখ হাসিনার পাতা ফাঁদে আমরা পা দেবো না।

জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব বলেন, আমাদের বাকস্বাধীনতা নেই, তাই এখানে জমায়েত হয়েছি। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন বলেন, অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটাধিকারের আকাঙ্ক্ষা সফল হবে। ড. কামাল অহিংস আন্দোলন বিশ্বাস করেন। আমাদের পক্ষে কোনো রকমের সহিংসতা করা যাবে না। যারা ভোটাধিকারের বিরোধিতা করছে তারা সহিংসতা করার চেষ্টা করবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,  বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুল হক আসপিয়া, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, খন্দকার আব্দুল মোকতাদির, তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমেদ আবদুল কাদের, নাগরিক ঐক্য সিলেটের আহ্বায়ক জিল্লুর রশিদ, গণফোরাম নেতা আ হ ম শফিকুল আলম, জগলুল হায়দার আতিক, মোকাব্বির খান, বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আকতার, বিএনপির সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জেএসডির ইস্কান্দার রাজা চৌধুরী, বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি জিকে গউস, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পঙ্কি প্রমুখ।

সভা পরিচালনা করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেটের সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৮/আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা
এমএইচ/এনইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।