ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মহাজোটের জয় ও ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির কারণ জানালেন ইনু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৯
মহাজোটের জয় ও ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবির কারণ জানালেন ইনু সাংদিকদের ব্রিফ করছেন হাসানুল হক ইনু/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সহিংসতা, নাশকতা ও মাঠ পর্যায়ে বিএনপি প্রার্থীদের সক্রিয়তা না থাকার কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির ভরাডুবির বিপরীতে দশ বছরে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বাংলাদেশ চালিত হওয়ায় বিপুল ভোটে মহাজোটের বিজয় হয়েছে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

মঙ্গলবার (১ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) কার্যালয়ে ‘বিএসআরএফ-সংলাপ’ অনুষ্ঠানে একথা জানান মন্ত্রী।
 
মহাজোটের শরিক জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোটের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, এই জোটটা মানুষের জোট, এটা ফেরেস্তারও জোট না, শয়তানেরও জোট না।

আমরা গণমানুষের সঙ্গে সুখে-দুঃখে কাজ করার চেষ্টা করি।
 
ইনু বলেন, পরপর দুই মেয়াদে দেশ পরিচালনায় মহাজোট সরকার যে নজির স্থাপন করেছে, দেশের মানুষের জীবনমান-অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছে, সর্বপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতিকে যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে সে মহা কর্মযজ্ঞই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারকে এ অভাবনীয় বিজয় এনে দেয়।
 
‘এছাড়াও মহাজোটের রাজনৈতিক অবস্থান খুব পরিস্কার ছিল। উন্নয়ন, রাজনৈতিক শান্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর দৃঢ়ভাবে অবস্থান করে শেখ হাসিনার সরকার শান্তির জন্য, জঙ্গি সন্ত্রাস দমনের জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশকে টেনে তোলার জন্য এই অভাবনীয় বিজয় হয়েছে। ’
 
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বিদ্যুৎহীনতার অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসের রক্তাক্ত অবস্থান থেকে শান্তির পথে নিয়ে আসতে সক্ষম হন এবং দারিদ্র্য থেকে সমৃদ্ধির উন্নয়নের রাস্তায় বাংলাদেশকে চালিত করতে সক্ষম হন।
 
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের পরাজয়ের কারণও বলেন জাসদ সভাপতি ইনু।
 
‘অপরদিকে, মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নেতৃত্বহীনতা, বিএনপির প্রার্থীদের আয়েশি মনোভাব এবং মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্য তাদের ভরাডুবির কারণ হলেও আরো অনেক কারণ রয়েছে। গণতন্ত্র থেকে সরে গিয়ে জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতা, হত্যা, খুন, ধ্বংসের অপরাজনীতি অনুসরণ করায় তাদের এই ভরাডুবি হয়েছে। ’

‘দশবছর দায়িত্ব জ্ঞানহীন রাজনীতি অনুসরণ করেছে, বিরোধীদলের ভূমিকাও তারা পালন করতেও পারেনি। বিরোধীদলে থাকার সময় সংসদ ও সংসদের বাইরে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারেনি, জনগণকে কোনো স্বপ্নও দেখাতে পারেনি। সংসদের ভেতরে-বাইরে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ’
 
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, তারা ভোটের সময় দায়িত্বহীন আচরণ করেছে। তারা নীবর ভোট বিপ্লবের কথা বারবার বলেছে কিন্তু তাদের কার্যক্রম ছিল প্রেস বিপ্লব। সারক্ষণ ঢাকায় বসে সাংবাদিকদের সামনে এবং টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থিত ছিল। মাঠ পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতের কোনো উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে।
 
ইনু দাবি করেন, নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, অন্তর্কলহ, দিক নির্দেশনাহীনতা প্রার্থীদের জনগণ ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বিএনপি-জামায়াত মাঠ পর্যায়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি, তাদের সম্পর্ক আলগা হয়ে গেছে। বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা পক্ষ ত্যাগ করতে শুরু করেছে। নির্বাচনে মন না দিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে মন দিয়েছিল। সঠিক প্রার্থী দেয়নি, প্রার্থীরা মাঠে যায়নি।
 
মুক্তিযোদ্ধা ইনু বলেন, ২ কোটি ২৫ লাখ নতুন ভোটারের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। এত ভোটার উপস্থিতি আগে কোনো দিন দেখিনি। এই নির্বাচন সবচেয়ে কম সহিংসাপূর্ণ ছিল। পর্যবেক্ষকরাও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
 
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত হারলেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানায়, এটা তাদের বদ অভ্যাস। এটা পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরত আসবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
 
গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমি আপনাদের মাধমে নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব সহযোগী সংস্থার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাই এ দেশের সব মানুষকে যারা উৎসাহের সঙ্গে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের, গণমাধ্যমের সব প্রতিষ্ঠানকে। গণমাধ্যমকর্মীরা নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইনু বলেন, সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জের একটা হচ্ছে সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নটা রক্ষা করে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দুই জঙ্গী-সন্ত্রাস দমন করে যে শাস্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেই শান্তি বজায় রেখে সাম্প্রদায়িকতা এবং সামরিক শাসনের যে জঞ্জাল এখনও রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলা।
 
‘এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন তা আমি পরিষ্কার করে বলছি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন এবং সুশাসনের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন। ’
 
বিএসআরএফ সভাপতি শ্যামল কুমার সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহসীন আশরাফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।