শনিবার (০৫ জানুয়ারি) বিকেলে শিশু কল্যাণ মিলনায়তনে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, বছরের শুরুতে একটা নির্বাচন হয়েছে, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কোনো খেয়াল খুশির ব্যাপার না।
‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, দেশের অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনকে কত রকমের আঘাত দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পূর্বশর্ত হলো প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন। সেখানে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে তো প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র হয় না। ’
তিনি বলেন, জনগণ যদি ঠিকমতো ভোট দিতে পারে, তাহলে তারা তাদের মালিকানা ভোগ করতে পারে। নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে যদি ভোট দিতে পারে, তাদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতির ওপরে যদি আঘাত দেওয়া হয়, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিধানগুলো যদি অমান্য করা হয় তখন কিন্তু সেটা সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে। সরকার এগুলো ভঙ্গ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচনকে কিভাবে অপ্রত্যাশিত প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করা হয়েছে তার কিছু খণ্ড চিত্র স্যোশাল মিডিয়া ও নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের সুবাদে জানতে পেরেছি। আজ গণফোরামের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা হয়।
‘এ সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধি ও প্রার্থীদের বক্তব্য থেকে গত নির্বাচনে বিভিন্ন ন্যাক্কারজনক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগ একজোট হয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে চরম নৈরাজ্যকর ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের জনগণকে অসহায় করে ফেলেছে। ’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের নির্বাচতি বলে ঘোষণা করেছে তারা কেউ নির্বাচিত নন এবং যাদের গেজেট প্রকাশ করেছে তারা কেউ জনগণের প্রতিনিধি নন। আমরা ইতোপূর্বে এই নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছি। আমরা অনতিবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ঐক্যবদ্ধ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের হারানো গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবই।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলাম যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করতে পারি। আমি আশা করি ঐক্যফ্রন্ট যদি কার্যকর থাকে, তাহলে নির্বাচন ও অন্যান্য ব্যাপারে সরকার চাপে থাকবে।
গণফোরামের নির্বাচিত দুজন সংসদ সদস্য শপথ নেবে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। আমার নিজের ধারণা যে ইতিবাচক সিদ্ধান্তই আমরা নেবো।
এ সময় তার পাশে বসে থাকা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘না, নেবে না। ’
নির্বাচনের বিষয়ে যেসব অভিযোগ করেছেন তার কোনো দলিল আছে কি-না বা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেবেন কি-না? জবাবে ড. কামাল বলেন, দলিলপত্র তো অবশ্যই আছে। আমরা যা বলছি তা তো দলিলপত্র দেখেই বলছি। গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু সব সময় বলে আসছি, ঐক্যের পক্ষে। সেজন্য নীতিগতভাবে মনে করি ঐক্য থাকার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেবো।
আন্দোলনের দিকে যাবেন কি-না, বা গেলে কি ধরনের কর্মসূচি হবে? জবাবে কামাল বলেন, আন্দোলন তো আমরা করেই যাচ্ছি। জনমত গঠন করাও এক ধরনের আন্দোলন। আমরা আন্দোলন করে যাবো। সেটা আরও তীব্র হতে পারে।
জামায়াতকে নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি দেবেন কি-না জবাবে ঐক্যফ্রন্টের এ শীর্ষ নেতা বলেন, জামায়াত আমাদের ফ্রন্টে নেই। তারা ২০ দলীয় জোটে আছে।
গণফোরামের বর্ধিত সভায় দলের দুই এমপির সংসদে যাওয়ার পক্ষে, না বিপক্ষে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফোরামের আলোচনা তো প্রেসকে জানানোর কথা না। সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি নেতাকর্মীদের বলেছিলাম সকাল থেকে কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার কথা। কিন্তু কাজ তো রাতেই শেষ হয়ে গেছে।
এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আপনারা সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। অপর দিকে বিএনপি বলেছে, তারা শপথ নেবে না। তাহলে ঐক্যফ্রন্টে বিভক্তি দেখা দিচ্ছে কি-না?
এর জবাবে ড. কামাল বলেন, ঐক্যফ্রন্ট তো আমরা রাখার জন্যই করেছি। ঐক্যের মধ্যে দিয়েই সেই শক্তি পাওয়া যায়, যেটা দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা যায়।
আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? জবাবে তিনি বলেন, এক এক সরকার অভিনন্দন জানিয়েছে। তাদের সেই বক্তব্য যদি পড়েন তার মধ্যে অনেক কিন্তু থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, দুই নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মোকাব্বির খান, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৮
এমএইচ/এমএ