এবার সরকারের কাছে সুপারিশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসির কাছে আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার পরিবার।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বজনদের পক্ষ থেকে এ আবেদন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনরা সাক্ষাৎ করতে গিয়ে বিএসএমএমইউর ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে আবেদন করেন বিএনপি প্রধানের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। এরপর তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম অন্যদের নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গণমাধ্যমের সামনে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে এবং সেজন্য তারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে হলেও তার মুক্তি চান।
খালেদা জিয়ার স্বজনদের পক্ষ থেকে আবেদনের কথা স্বীকার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে জানান, তিনি আবেদনটি মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। ইতোপূর্বে মেডিক্যাল বোর্ড বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার কোনো সুপারিশ করেনি। ওনাদের (খালেদা পরিবারের) আবেদন মেডিক্যাল বোর্ডকে দেবো। বোর্ড পরীক্ষা করে কী সাজেশন দেয়, সেটা আমরা পরে জানাবো।
এদিকে সেলিমা ইসলাম খালেদা জিয়ার জন্য বিএসএমএমইউর ভিসির কাছে আবেদনের কথা স্বীকার করে বলেন, আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চেয়েছি। আর বলেছি যে, ওনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে। কারণ এটা মিথ্যা মামলা। সেজন্য আমরা নিঃশর্ত মুক্তির জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, আশা করছি আমাদের আবেদন বিবেচনা করা হবে। আমরা চাচ্ছি সরকার বিবেচনা করুক। যেভাবেই হোক, তাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আমাদের পারমিশন দিক। প্যারোলে দিলেও দিতে পারে। কারণ তার অবস্থা খুবই খারাপ।
সেলিমা ইসলাম আরও বলেন, ওনার সম্মতি থাকবে। অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গেছে যে পাঁচ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। বাম হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। ডান হাতেরও খারাপ অবস্থা। তার চোখ দিয়েও অনবরত পানি পড়ছে। পায়ে কোনো সাপোর্ট রাখতে পারছেন না। এ অবস্থায় একটা মানুষতো চিকিৎসার জন্য যেখানেই হোক যেতে চাইবে।
দুই বছর ধরে কারাগারে আবদ্ধ থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার কথা বলা হলেও এই প্রথম তার স্বজনদের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হলো।
বিএসএমএমইউর সূত্রে জানা যায়, লিখিত আবেদনে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার লিখেছেন, খালেদা জিয়ার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয় বহন করে এবং তাদের দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।
এদিকে, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মঙ্গলবার ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বজনরা হাসপাতালে ওনাকে দেখতে গিয়েছেন। তারা দেখা করার পর যে বক্তব্য দিয়েছেন এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই।
এ বিষয়ে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। আমাকে পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ১৭ বছরের সাজা নিয়ে জেল খাটার দুই বছর পুরো হয়েছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি। এর মাঝে প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিছুদিন আগে সুপ্রিমকোর্ট থেকে তার জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে। তার মুক্তি না পাওয়ার বিষয়টি আইনগত বলে সরকার বলে আসছে। অপরদিকে বিএনপি বলছে, খালেদা জিয়াকে সরকার মিথ্যা মামলায় আটক রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০
এমএইচ/এএ