ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

৬ বছর পর কোন্দলপূর্ণ শিবগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
৬ বছর পর কোন্দলপূর্ণ শিবগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দলের মধ্যে রয়েছে কোন্দল, নানান অভিযোগ-অনুযোগ। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সম্মেলন।

ছয় বছর আগে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হন নেতারা। আর এ ব্যর্থতা নিয়েই অবশেষে কেন্দ্রের নির্দেশে কোন্দলে জর্জরিত শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘ ছয় বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

 

তবে সম্মেলন ঘিরে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হলেও কোন্দলের কারণে সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এরই মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের স্থান কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বির্তকের। একটি পক্ষ এ সম্মেলন বানচালের পাঁয়তারা করছে বলেও আওয়ামী লীগের একটি অংশ সংশয় প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে বির্তক।

জেলার তিনটি সংসীয় আসনের একটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ)। শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। যেখানে গত সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল ও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল বাঁধে।  

এক পর্যায়ে শো-ডাউন, হামলা, পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে কোন্দল আরও তীব্র রূপ নেয়। উভয়ের কোন্দলের জেরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দরের বাণিজ্যে নেমে আসে স্থবিরতা।  

আসন্ন এ ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে সভাপতি পদে বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর ভাই ও আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক, চেয়ারম্যান গ্রুপের হয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম ও একই গ্রুপের হয়ে দুর্লভপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আহম্মেদ নাজমুল কবীর মুক্তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান এমপির অনুগত বর্তমান শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আতাউর রহমান, শিবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিনোদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুল আলম আসাদ ও সাবেক ছাত্রনেতা তৌহিদুল ইসলাম টিয়া। চেয়ারম্যানের অনুগত শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুল ইসলাম টুটুল খানও লড়ছেন একই পদে।

সত্রাজিতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ছবি বাংলানিউজকে বলেন, সবশেষ ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী ও অ্যাডভোকেট আতাউর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পেরে ব্যর্থতা দেখিয়েছে। তাই তাদের আগামী সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা নেই।  

আর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুল ইসলাম টুটুলের দাবি, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকায় দলে কোনো শৃঙ্খলা নেই।  

অবশ্য দলটির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক তার ব্যর্থতা অস্বীকার করে দোষ চাপান জেলা কমিটির উপর। তার দাবি, জেলা কমিটি উপজেলা কমিটিকে অনুমোদন না দেওয়ায় তিনি কমিটি করতে ব্যর্থ হন।

অন্যদিকে দুলর্ভপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় নিজের ইচ্ছামতো সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করেছেন।  

তিনি নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রাণীহাটিকে সন্ত্রাসের ঘাঁটি ও জামায়াত-বিএনপির আখড়া হিসেবে দাবি করে অভিযোগ করেন, স্থানীয় এমপি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে বিএনপি ও জামায়াত অধ্যুষিত রাণীহাটিকে বেছে নিয়ে সম্মেলন বানচালের চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বাংলানিউজকে বলেন, শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামের সামনের কলেজে পরীক্ষার জন্য সেখানে সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। দলের সবার মতামতের ভিত্তিতেই রাণীহাটিতে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।  

দলকে বিভক্ত করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতিও চলছে দ্রুতগতিতে। তবে আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী হবেন কিনা তা পরিষ্কার করেননি।

এদিকে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২৩ তারিখের কাউন্সিল সুষ্ঠভাবে করার জন্য থানা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তারা প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান কাউন্সিলর হবেন।  

এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ১০ জনকে কাউন্সিলর করার জন্য বলা হয়েছে। আর সেখানে ত্যাগী প্রবীণ নেতারা স্থান পাবেন। আর এ বিষয়টি দেখবেন স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।