ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নবী প্লেনে ওঠেননি আপনারা ওঠেন কেন, প্রশ্ন হানিফের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
নবী প্লেনে ওঠেননি আপনারা ওঠেন কেন, প্রশ্ন হানিফের স্বাধীনতা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের আলোচনা সভায় মাহবুব-উল-আলম হানিফ | ছবি: শাকিল

ঢাকা: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, নবী করিম (স.) কখনো প্লেনে ওঠেননি, আপনারা কেন প্লেনে ওঠেন?

তারা (অপব্যাখ্যাকারীরা) কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দেন, হাদিসের দোহাই দেন, এটা মহানবী করেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ আরও বলেন, নবী কখনো ছবি তোলেননি, আপনারা ছবি তোলেন, নবী প্লেনে ওঠেননি, আপনারা ওঠেন কেন? নবী গাড়িতে ওঠেননি, আপনারা কেন গাড়িতে ওঠেন? ইসলাম কখনো এ কথা বলে নাই, ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে যুগোপযোগী ও সেরা ধর্ম।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বাধীনতা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট: শিক্ষক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

তিনি বলেন, আজকে মুসলমান যারা আমরা দাবি করছি—  আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তাহলে হিন্দু ধর্মের যারা, তাদের কে সৃষ্টি করেছে?  খ্রিস্টান ধর্মের যারা, তাদের কে সৃষ্টি করেছে? বৌদ্ধ ধর্মের যারা, তাদের কে সৃষ্টি করেছে? সবই এক আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন। আমরা যদি মনে করি যে, আমাদের সৃষ্টি যদি কোরআন অনুযায়ী হয়, তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টি করার পর আমরা কথা বলার কে? কে অধিকার দিয়েছে? আল্লাহপাক তো ঠিক করে দিয়েছেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।

মাওলানা মামুনুলু হককে উদ্দেশ্যে করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি সেদিন দেখলাম, কোনো একজন ইসলাম ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে নব্য রাজাকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা বলছেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্য করিনি। আরে কে তুমি? তোমরা তা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলে। তুমি ছিলে স্বাধীনতার বিপক্ষে, তোমার বাবাও স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। তুমি রাজাকারের সন্তান। এই বাংলাদেশে রাজাকার আলবদরদের মুখে স্বাধীনতার কথা মানায় না। তারা আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, তারা কীভাবে জানবে যুদ্ধ হয়েছিল কোন মূলনীতির ওপর। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭০-এর নির্বাচনে এদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুকে ম্যানডেট দিয়ে ছিল। ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এ চার মূলনীতির ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু জনগণের ম্যানডেট নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। স্বাধীনতার এ চার মূলনীতি আমাদের সংবিধানে যুক্ত হয়।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ আরও বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা নাকি ইসলামে জায়েজ নয়। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে জানতে হবে। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। যার যার ধর্ম, সে তার মতো পালন করবে।

মাওলানা মামুনুল হকসহ ধর্মের অপব্যাখ্যাকারীদের উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, আজকে তারা ইসলামের নাম করে যে ভাষায় কথা বলছে, এর মধ্যে কোনো শান্তির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়? যে ভাষায় কথা বলছেন, এদের মধ্যে কোনো সভ্যতা খুঁজে পাওয়া যায়? তারা উগ্র সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী টাইপের কথাবার্তা বলছেন।

রাজাকারের আস্ফালন শোনার জন্য এ দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন করা হয়নি মন্তব্য করে হানিফ বলেন, আমরা পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই—  যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। একাত্তরের পাকিস্তানি ও আলবদর আল শামসদের পরাজিত করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই রাজাকারের আস্ফালন শোনার জন্য নয়। একাত্তরে পরাজিত করেছি, প্রয়োজন হলে আবারও এদের পরাজিত করে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও আজ নতুন করে স্বাধীনতার কথা বলতে হয়, সংবিধান নিয়ে কথা বলতে হয়। জাতীয় সংগীত নিয়ে কথা ওঠে। আজ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার নাম দিয়ে বা ধর্মের দোহাই দিয়ে আজ তারাই নতুন সুরে নতুন লেবাস গায়ে দিয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে সংবিধানের ওপর আঘাত হানছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান অ্যাখ্যা দিয়ে হানিফ বলেন, আজ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সবাই ভাস্কর্য ইস্যুতে এক। এমনকি সরকারি চাকরিজীবী, যারা সরকারি কর্মকর্তা, তারাও এ দেশের সন্তান। তারাও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু ওই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে নীরব। আমি বলব— মির্জা ফখরুল সাহেব, অন্তরে স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করার চেষ্টা করেন।

স্বাধীনতা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এস এম জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান পান্না, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ তেলাওয়াত হোসেন খান ও অধ্যক্ষ মাওলানা মাহবুবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব তাজুল ইসলাম ফরাজী।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
টিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।