ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

বগুড়ায় মোটরমালিক গ্রুপের আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২১
বগুড়ায় মোটরমালিক গ্রুপের আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০ লাঠি মিছিল। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার দলের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। এ সময় অন্তত ৭ থেকে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময়  মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের অফিসসহ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

জানা যায়, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও মালামাল তার হেফাজতে চারমাথা বাসটার্মিনাল এলাকায় রাখে। এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে  মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে চারমাথায় এলাকায় গিয়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলের ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় সমবেত হয়। তারা যেকোনো মূল্যে মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেয় এবং পরিবহন শ্রমিকদের প্রত্যেক হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান নিতে বলে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চারমাথায় অবস্থান নেয়।

পুলিশ আমিনুলকে সমঝোতায় প্রস্তাব দিলে আমিনুল পুলিশকে জানিয়ে দেয় তারা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে অপর পক্ষকে প্রতিহত করবে। আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনেই লাঠি মিছিল শুরু করে। এ সময় মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে থাকাকালে মোহনের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের বেরিকেট ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। ধাওয়ায় তারা পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা ব্যাপক ভাঙচুর করে। তারা এলোপাথারি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়াও আমিনুলে নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় আধাঘণ্টা ব্যাপী  দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও তাণ্ডব চলে। এসময় ভাঙচুরের ছবি তুলতে জিটিভির ক্যামেরাপার্সন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ছাড়াও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। অন্যদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিলে পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে মোহন গ্রুপের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এসময় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করে।

সংঘর্ষের কারণে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর আমিনুল গ্রুপ চারমাথা এলাকায় অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়। চারমাথা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, একটি গ্রুপ জেলা মোটর মালিক শ্রমিক গ্রুপের অফিস দখল করতে আসছে এমন খবর পেয়ে ফোর্স পাঠানো হয়। এ সময় হামলায় ডিএসবির এক সদস্য ছুরিকাহাত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ৬ থেকে ৭ জনকে আটক করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।