ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ভাদ্র ১৪৩১, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘এই বেয়াদব তুই এহেনে কি করস রে’ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২১
‘এই বেয়াদব তুই এহেনে কি করস রে’ 

শেরপুর: ‘একটি মিটিং শেষ করে নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর তার কর্মীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ ভবনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন এ সময় নিচে আমার ছেলে সাব্বির দাঁড়ানো ছিলো। মেয়রকে দেখে সাব্বির সালাম দেন।

সালামের জবাব না নিয়ে মেয়র তাকে ধমক দিয়ে বলেন ‘এই বেয়াদব তুই এহেনে কি করস রে’। এটা বলে উনি যাওয়ার পরই তার (মেয়রের) অনুসারীরা সাব্বিরকে মারধর শুরু করে। পরে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান লেবু সাব এসে আমার ছেলেকে উদ্ধার করেন, তখন মেয়রও ওই জায়গায় এসে তার কর্মীদের নিয়ে গেছেন। ’ 

তিনি আরও বলেন, ‘লেবু সাব আমার ছেলেকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী হাসপাতালে পাঠায়। পরে আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা ময়মনসিংহে আমার ছেলেকে রেফার্ড করে। এখন আমার ছেলে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে ভর্তি আছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই। ’

কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের উপ-মানবসম্পদ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ বাদশার বাবা আব্দুল মতিন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো ২০ জনকে আসামি করে নালিতাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন।  

অভিযোগ উঠেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকের প্ররোচণায় তার কর্মী সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালায় ওই ছাত্রলীগ নেতার ওপর। গত বুধবার (২০ মে) বিকেলে নালিতাবাড়ী ইউএনও কার্যালয়ে একটি মিটিং শেষে ফেরার পথে মেয়রের কর্মীরা তাকে মারধর করে বলে জানান সাব্বিরের বাবা। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ বিভাগকে জানিয়েছেন ইউএনও।  

অন্যদিকে, শুক্রবার (২১ মে) সকালে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বাংলানিউজকে জানান, এ ঘটনায় হামলার শিকার সাব্বিরের বাবা একটি মামলা দায়ের করেন। এখন আসামিদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।  
 
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে বের হওয়ার সময় মেয়র আবু বক্করকে সালাম দেন ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির। সালাম দেওয়ার পরপরই মেয়রের পেছনে থাকা তার কর্মীরা সাব্বিরের ওপর হঠাৎ চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকে। পরে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকসেদুর রহমান লেবু এগিয়ে গিয়ে হামলাকারীদের কাছ থেকে সাব্বিরকে উদ্ধার করেন। এরপর মেয়র ঘটনাস্থলে এসে তার কর্মীদের ফিরিয়ে নিয়ে যান।  

এ ঘটনার পর জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে একটি প্রেসবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। এছাড়া যে যেখান থেকে পারেন নালিতাবাড়ীর মেয়র মহোদয়কে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সালামটা জানিয়ে দিবেন এমন বক্তব্য লিখে সালাম দেয়ার ভঙ্গিমায় বেশকিছু ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহমেদ শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, মেয়রের সামনে জেলা ছাত্রলীগের একজন পোস্টেড নেতাকে মারধরের ঘটনা লজ্জাজনক। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মেয়রের সঙ্গে থাকা ছেলেগুলোই সাব্বিরের ওপর হামলা করেছে।  

এদিকে বিষয়টি খুবই খারাপ কাজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোকসেদুর রহমান লেবু।

নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক দাবি করেন, তিনি বা তার কর্মী সমর্থকরা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। স্থানীয়ভাবে রাজনীতিতে তাকে হেয় করার জন্য এই ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনি নিজেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান।  

এদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ বিভাগকে জানিয়েছেন নালিতাবাড়ীর ইউএনও হেলেনা পারভীন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।