ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

মেয়র পদও হারাচ্ছেন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
মেয়র পদও হারাচ্ছেন! ...

গাজীপুর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে মেয়র পদও এখন ঝুঁকিতে রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত এই মেয়রের।

দল থেকে বহিষ্কার হলে সংসদ সদস্য পদ হারানো-না হারানো—দুই রকম নজিরই আছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের মেয়রের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতি এবারই প্রথম। সিটি করপোরেশন নির্বাচনেরও মেয়র প্রার্থীরা দলের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেন।

দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকীকে দল বহিষ্কার করলে তাঁর সংসদ সদস্য পদ নিয়ে বিতর্ক হয়। লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের বিষয়ে দলের চিঠি পেয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি দেন সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে তাঁর সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এতে লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের পক্ষেই রায় দিলে লতিফ সিদ্দিকী আপিল করেন। কিন্তু আপিল বিভাগও হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশ না নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করেন।

অন্যদিকে দল থেকে বহিষ্কার হয়েও এমপি পদে বহাল থাকেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য (সাতক্ষীরা-৪) গোলাম রেজা ও বিএনপির সংসদ সদস্য (রাজশাহী-৪) আসনের সংসদ সদস্য আবু হেনা। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এ দুজনের বিষয়ে তাঁদের দল থেকে সংবিধানের ৬৬ ধারা অনুসারে পদক্ষেপের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে দল থেকে বহিষ্কার হলে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিধান আছে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে কী হবে সেই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে। দলীয় প্রতীকে সিটি মেয়র পদে নির্বাচন শুরু হওয়ার পর নির্বাচিত কোনো মেয়রকে তাঁর দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনা এই প্রথম। এ অবস্থায় শুধু দল থেকে বহিষ্কারের কারণে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদ হারাবেন কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে।

আইন অনুযায়ী, কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত আমলে নিলে এবং অসদাচরণ প্রমাণ হলে মেয়রদের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা যাবে। জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষেত্রে দল থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে দল কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয় তার ওপরও জাহাঙ্গীরের ভাগ্য নির্ভর করছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, দল থেকে বহিষ্কার হলে দলীয় মেয়র তাঁর পদ হারাবেন—এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন আইনে কিছু বলা নেই। এই আইনে বলা আছে, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে এবং নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হলে তাঁকে অপসারণ করা যাবে।

তিনি বলেন, একজন দলীয় মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কার এই প্রথম। তাই আইনের আরও পর্যালোচনা ছাড়া বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।

তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, এমন কোনো বিধান না থাকলেও সরকার চাইলে সিটি করপোরেশনের একজন মেয়রকে অপসারণের অনেক পথ আছে। অসদাচরণ বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মেয়রকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২১
এসবি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।