ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদা জিয়া মানবাধিকার বঞ্চিত: ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২১
খালেদা জিয়া মানবাধিকার বঞ্চিত: ফখরুল বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর)  বিকেলে রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক,স্বা ধীনতা-সার্বেভৌমত্বের প্রতীক তিনিও আজকে মানবাধিকার, ন্যুনতম যে অধিকার, তার চিকিৎসার অধিকার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

‘আজকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থা রেখে দেওয়া হয়েছে।

গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের বেদনার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন,  আজকে এখানে আপনারা গুম হওয়া পরিবারের কথা শুনেছেন। গত ৮ বছর ধরে আমরা এই পরিবারগুলোর কান্না শুনছি, আমরা শিশুদের কান্না শুনছি। এখনও তাদের শিশুরা অপেক্ষায় আছে কখন বাবা ফিরে আসবে। এরকম একটা ভয়াবহ মর্মস্পর্শী পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। বাংলাদেশে আমরা যারা আছি আমাদের বার বার একথা বলার আর প্রয়োজন নেই যে, এখানে কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।

তিনি বলেন, একটা কথা খুব পরিষ্কার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র এই দুটি পরস্পরের পরিপূরক। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কোনোদিন রক্ষা হতে পারে না, আর মানবাধিকার ছাড়া কখনও গণতন্ত্র চলতে পারবে না। গত কয়েক বছরে আমাদের এখানে যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আছে তাদের হিসাবেই প্রায় ৬০৭ জন গুম হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ সময় আমাদের প্রায় সহাস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। ঢাকার যে কোনো কোর্টে যান, জেলা আদালতগুলোতে যান, দেখবেন আসামিদের ৯০ ভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে ইংরেজীতে লেখা ‘Disenfrenchenchisment under the authorian regime’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই গ্রন্থে।

দেশের বিচার বিভাগ ও প্রশাসন দলীয়করণের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, বিচার বিভাগের ওপর এদেশের মানুষ কোনো আস্থা রাখতে পারছেন না। কারণ তাদের কাছে মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। ’

প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হচ্ছে, গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা হয়েছে। বলতে কোনো দ্বিধা নেই আজকে যারা গণমাধ্যম কর্মী আছেন, তারা সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটির অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন কথা বলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেছেন, আমি আগে একটা বাক্য খুব দ্রুত লিখতে পারতাম। কিন্তু এখন একটা বাক্য লিখতে ৭দিন সময় লাগে। বারবার চিন্তা করতে হয় যে, আমি যে বাক্যটা লেখব, যে শব্দগুলো লেখব তা বিপদ ডেকে আনে কিনা।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ‘জাতীয় ঐক্য’ সৃষ্টি করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।  

বিএনপির স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে ‘গুম’ হওয়া সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস, বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের ভাগ্নি আফরা আনজুম, ওমর ফারুকের স্ত্রী পারভীন আখতার, ছাত্রদলের মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আখতার তাদের স্বজনদের সন্ধান চেয়ে আবেগময় কণ্ঠে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, কানাডা, ডেমোক্রেসি ইন্টান্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিরা উপস্থতি ছিলেন। তবে বিভিন্ন দূতাবাস ও হাই কমিশনের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসেননি।

এছাড়া সেমিনারে গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, শওকত মাহমুদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, এম এ কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবু উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, আবদুল মালেক রতন, শিরিন সুলতানা, জহির উদ্দিন স্বপন, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাবিথ আউয়াল, জিয়াউদ্দিন জিয়া, জাহেদুল আলম হিটু, ফরিদা ইয়াসমীন, আতিকুর রহমান রুম্মন, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, সাংসদ রুমিন ফারহানা, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষমতাসীনদের বিক্ষোভ: বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় বিএনপির এই সেমিনার। এর প্রতিবাদ জানাতে লেকসোর হোটেলের সামনের ফুটপাতে ‘১৯৭৭ সালের জিয়ার আমলে গুম ষড়যন্ত্রের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার’ ও ‘বিএনপির আগুন সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত’ ব্যানারে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত অর্ধশতাধিক সদস্য বিক্ষোভ করেন। তারা জিয়াউর রহমানের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ করেন।

যতক্ষণ সেমিনার চলে ততক্ষণ তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চালায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা,  ডিসেম্বর ১০, ২০২১
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।