ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

এ নিষেধাজ্ঞা লজ্জাজনক: মোশাররফ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
এ নিষেধাজ্ঞা লজ্জাজনক: মোশাররফ এ নিষেধাজ্ঞা লজ্জাজনক: মোশাররফ

ঢাকা: দেশের ৫০বছর পূর্তি পালনের প্রাক্কালে বাংলাদেশকে একটি অগণতান্ত্রিক দেশের স্বীকৃতি, দেশের একটি প্রতিষ্ঠান ও কিছু কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে শেরে বাংলা নগরে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মোশাররফ বলেন, দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন।  আমরা যখন ৫০ বছর পূর্তি পালন করছি, আমরা আমাদের সব অর্জন দেশে বিদেশে প্রতিফলিত করবো, দেশে বিদেশে সমাদৃত হবো, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আজকে দুঃখের বিষয় আমরা যখন স্বাধীনতার ৫০বছর পালন করছি, তখন বাংলাদেশ একটি অগণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত হলো। এ বাংলাদেশের একটি সংস্থা আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হলো, কিছু কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পদে আছেন, তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার।

ড. মোশাররফ বলেন, আপনারা জানেন দেশ একটা সংকটের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে। দেশে গণতন্ত্র নাই, আইনের শাসন নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানুষের অধিকার নাই, কথা বলার অধিকার নাই এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও নাই। মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত। আপনারা দেখেছেন গতকাল (শুক্রবার) বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন হয়েছে, আমরাও পালন করেছি। বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে গণতান্ত্রিক দেশ আমেরিকা একটি ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের র‌্যাব সম্পর্কে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা করেছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক আমাদের জন্য। এছাড়াও গতকালই (শুক্রবার) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্যোগে একটি গণতান্ত্রিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। সে সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কেননা তারা বাংলাদেশকে মনে করে এটা গণতান্ত্রিক দেশ নয়।

তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি এক দশক ধরে এ দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে একটি দল গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকায় আজকে সারাবিশ্বে ভাবমূর্তি ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। তাই আমাদের কৃষক দলের  প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যয় এই যে- আমাদের যে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, সেটি পুনরুদ্ধার করা। আমাদের দেশনেত্রী মাদার অব ডেমোক্রেসি তাকে মুক্ত করা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ সৃষ্টি করা। জনগণ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের সরকার গঠন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাবো।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সবাই জানে যে বর্তমান সরকার একনায়কতন্ত্রের সরকার। এক ব্যক্তির ইশরায় বাংলাদেশের সরকার চলে। কি প্রশাসন, কি বিচার বিভাগ, কি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এটা প্রমাণিত সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে গলাধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সরকারের হুকুম পুরাপুরি তামিল না করার কারণে। গত নির্বাচনে আমরা দেখেছি প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংস্থাকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অতএব বাংলাদেশের একটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে নিষেধাজ্ঞা এটা বাংলাদেশ সরকারের ওপরে ঘৃনা এবং ক্ষোভের প্রকাশ।

তিনি বলেন, আজকে আমরা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে  দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। জিয়াউর রহমান এই অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে। কৃষকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা ঘটাতে কৃষক দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকে যখন আমরা কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এখানে এসেছি তখন অত্যন্ত কষ্টের বিষয় আমাদের দলের চেয়ারপারসন জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতালে মৃত্যূর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

মোশাররফ বলেন, আপনারা জানেন একটি বানোয়াট মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী একটি রায়ে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। একটি প্রশাসনিক অর্ডারে সাময়িকভাবে সাজা স্থগিত করায় তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তার চিকিৎসকরা একত্রে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তার যে চিকিৎসা সেটা বাংলাদেশে নেই। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোনো রকমের ভ্রুক্ষেপ করছে না। তারা বলছে এটা আইনের বিষয়, আসলে এটা আইনের বিষয় নয়, বাধা হচ্ছে সরকার। যে অর্ডারে দেশনেত্রীর সাজা সাময়ীকভাবে স্থগিত, সেখানে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। কিন্তু ওই ধারায়ই লেখা আছে নিঃশর্ত অথবা শর্তযুক্ত করতে পারেন। তাই ওই অর্ডারটি সংশোধন করে শুধুমাত্র যেখানে শর্ত দিয়েছে সেই শর্তটি কাট করা হয়, তাহলেই আমাদের নেত্রী বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা লাভ করতে পারেন। এ দিনে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি- দেশনেত্রীর চিকিৎসায় যে বাধা সেটা অপসারণ করে তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সিনিয়র সহসভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, সহসভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, মামুনূর রশীদ খান, যুগ্ম-সম্পাদক প্রকৌশলী টিএস আইউব, মোশারেফ হোসেন এমপি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২১
এমএইচ/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।