ঢাকা: নির্বাচন কমিশন গঠন আইনে কোনো ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দেওয়া হয়নি বরং লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে আগের দুইটি নির্বাচন কমিশন গঠনকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির সদস্যদের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী এ কথা জানান।
বৃহস্পতিবার(২৭ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইনের ওপর সংশোধনী ও যাচাই-বাছাই প্রস্তাব দিয়ে আলোচনার সময় বিএনপির সদস্যরা এই অভিযোগ করেন। এরপরে আইনমন্ত্রী তার বক্তব্যের সময় অভিযোগ খন্ডন করে এ কথা জানান।
আইনমন্ত্রী বলেন, ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা না। ইনডেমনিটি হচ্ছে একটা অন্যায় করার পরে তাকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য একটা আইন করা। আর লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে যে কোনো একটা বৈধ কাজ সেটা লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না সেটাকে লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া। ইনডেমনিটি কথাটা শুনলেই হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়।
তিনি বলেন, ইনডেমনিটি আওয়ামী লীগ দেয় না, ইনডেমনিটি বিএনপি দেয়। ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্ত ক্ষরণ করিয়েছে, ২১ বছর লাগিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, আমাদের জাতির পিতার হত্যা বিচার করতে। ইনডেমনিটির কথা আর আমাদের কাছে শোনাবেন না। আমরা ইনডেমনিটির পথে হাঁটি না। লিগ্যাল কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে যে কাজটা করা হয়েছে সেইটা থেকে শুরু করে, এমনকি এই আইনের মধ্যে কেউ যদি অন্যায় করে থাকে, কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তাকে কোনো প্রটেকশন দেওয়া হয় নাই।
বিলটি পাসের আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা অভিযোগ করেন আইনটি তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, তড়িঘড়ি করে আইনটি করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আমি বলেছিলাম- এটা তড়িঘড়ি করে করার আইন না। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে কোভিডের কারণে এই সময়ের মধ্যে সংসদে বিল এনে পাস করিয়ে দেওয়া কঠিন। আমি সংসদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এটা বলেছিলাম। সুশানের জন্য নাগরিক আমার কাছে গত নভেম্বরে একটি খসড়া দিয়েছিলো। আমি বলেছিলাম সসয় লাগবে। তারা বলেছিল অধ্যাদেশ করে দেন। তখন আমি বলেছিলাম সংসদকে পাশ কাটিয়ে কিছু করবো না।
মন্ত্রী বলেন, ২০১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য তাদের মতামত নিয়েছিলেন। তখনই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন- আইন করা দরকার। তখন রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা কনসাসনেন্স তৈরি হয়েছিলো। এরপর দুইটি কমিশন সেভাবে গঠিত হয়েছিলো। তখন কিন্তু কেউ কিছু বলেননি। আসলে আইনটি হয়ে গেলে আন্দোলন তৈরি করার মসলা আর থাকে না তাই বলা হচ্ছে তড়িঘড়ি।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ ও ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের সঙ্গে আইনটি সাংঘর্ষিক হবে বলে বিরোধী দলের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ১১৮ অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যেভাবে ইচ্ছা নিয়োগ দিতে পারেন। সেখানে আমরা স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার জন্য কিছু বিণয় সংযুক্ত করেছি। সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। এই কারণে সংবিধান বলছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করার দায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কথা নাই বার্তা নাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই জন্যই বলি ওনারা তো তাল গাছ চান, এইটা আমার। উনারা কিছু মানে না যতক্ষণ পর্যন্ত এই তালগাছটা তাদের না হয়। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের দুইটি বিভাগই বেআইনি ঘোষণা করল। তারপরও তারা এখন বলবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা দেশের আদালতের রায়ও মানে না। বিএনপির কথা হচ্ছে সেটা আজম মোহাম্মদ আলী জিল্লাহ করে গিয়েছিলো সেটা ভালো। যেটা যুক্ত করে রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতি পিতা করে দিয়েছিলেন সেটা ভালো না। একজন সদস্য বলেছেন ঐক্য মতের কথা। ঐক্য মত হতে পারে সত্যকে স্বীকার করলে। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানলে। বিএনপি ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছিলো এটা স্বীকার করলে, ইনডেমনিটি অধিনেন্সের মাধ্যমে খুনিদের বিচার হতে দেয়নি, তাদের পুনর্বাসন করেছে। এগুলো স্বীকার করে জনগণের কাছে মাফ চেয়ে আসলে জাতীয় ঐক্যমত হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
এসকে/এনএইচআর