ঢাকা: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবির বিষয়টি এতদিন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিচ্ছিন্নভাবে বললেও এবার দলগতভাবে এই দাবিটি সামনে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছে বিএনপি।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাসের পরই শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক হয়।
জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দলীয় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে এই দাবি আদায়ে আন্দোলনের কলাকৌশল কী হবে তা নিয়েও মত দিয়েছেন।
জানা গেছে, বিএনপি তাদের নেতৃত্বাধীন একাধিক জোট ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এখন নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে বৃহৎ একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠনের চেষ্টা চলছে। ওই প্লাটফর্মে সরকারবিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য শিগগিরই মাঠে নামবে বিএনপি।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের এক দফার দাবির সপক্ষে একটি রূপরেখা দেবে বিএনপি। এর ওপর ভিত্তি করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ওই কর্মসূচিতে জামায়াত থাকবে কি না সেটা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে জামায়াতের ব্যাপারে বাম দলসহ যাদের আপত্তি আছে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেবে বিএনপি। যদিও দলটির অনেকে মনে করেন জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেওয়া হলে সরকার চাইবে দলটিকে তাদের পক্ষে নিতে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সামনে এগুতে চায় বিএনপি। সেক্ষেত্রে একদফা দাবিতে যার যার মতো করে আন্দোলনে নামার কৌশল নিয়েও আলোচনা চলছে।
গত কয়েক মাস ধরে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি এককভাবে বলে যাচ্ছে আগামী নির্বাচন অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যদি সরকার মেনে না নেয় তাহলে তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করা হবে। এসব বক্তব্য দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলে আসলেও এবার দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের সবাই বিষয়টিতে একমত পোষণ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতেই এবার আন্দোলন হবে। একাধিক প্লাটফর্ম থেকেও আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বে একটি বৃহৎ প্লাটফর্ম, ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে ভিন্ন একটি প্লাটফর্ম এবং বাম দলগুলো নিয়ে আরেকটি প্লাটফর্ম গড়ে উঠতে পারে। কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৃহৎত্তর প্লাটফর্মের নেওয়া সিদ্ধান্তই অন্য দলগুলো সমর্থন করবে অথবা তারাও স্বাধীনভাবে দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করে মাঠে থাকবে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সরকারবিরোধী সব পক্ষকে এক টেবিলে বসানোর যে ভাবনা নিয়ে তারা এগোচ্ছেন, তা বিদ্যমান জোট কাঠামোতে সম্ভব না-ও হতে পারে। সরকারবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতার মনোভাব থাকায় আন্দোলনের ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম হতে পারে। এ লক্ষ্যে বিএনপি কয়েক মাস আগে একটি রূপরেখাও তৈরি করেছে, যা জাতির সামনে তুলে ধরে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ। এর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
এমএইচ/আরএ