ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়ার প্রশ্নই আসে না: ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়ার প্রশ্নই আসে না: ফখরুল গুরুদাশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ সাহেবকে দেখতে হাসপাতালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যরা।

ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সার্চ কমিটি নাম চাইবে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের কাছে এর কোনো মূল্য নেই। অর্থহীন, নাম দেওয়ার তো প্রশ্নই উঠতে পারে না।

আমরা গতবারও এর অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে কোনো লাভ হয়নি। যে সরকার থাকে তার পছন্দনীয় কমিশন তারা তৈরি করবে। সেটাই তারা করবে’।

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলায় আহত নাটোরের গুরুদাশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজকে দেখতে এসে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সার্চ কমিটি, ইসি সম্পর্কে স্পষ্ট করে আমাদের বক্তব্য বলেছি। আমরা মনে করি যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকা ও আবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার তাই করছে। তারা আইনও একটা করেছে। মানুষকে প্রতারণা করার জন্য। তারা দেখাতে চায়, সবকিছু সুন্দরভাবে করছি। সবার কাছ থেকে মতামত নিয়ে করছি। কিন্তু দেখা যাবে কেএম নূরুল হুদার মতো লোকজনকেই তারা বানাবে। এই সার্চ কমিটির মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একজন আছেন যিনি আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়েছিলেন। এ ধরনের সার্চ কমিটি করবে আগে থেকে জানি বলেই আমরা সার্চ কমিটি ও রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার ব্যাপারে না করে দিয়েছি। এখনও বলছি যে, এই সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হয় সেটা কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার থাকে। অর্থাৎ নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না’।

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা এখানে এসেছিলাম নাটোরের গুরুদাশপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ সাহেবকে দেখতে। তিনি ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একটি জানাজা থেকে ফেরার সময় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে আক্রমণ করেছে। তার মাথায় ৪০/৪৫টা সেলাই লেগেছে। বাম পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয়।  পরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তার জীবনের যে, ঝুঁকি সেটা গেলেও তার পঙ্গ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। এটা সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় এমপির মদদে করা হচ্ছে। এটা সারা দেশে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস। গতকাল দেখেছেন নয়াপল্টনে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করা হয়েছে। মহানগর নেতা মজনুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা হলো গত একযুগ ধরে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে টিকে থাকতে চায়। বাংলাদেশের জনগণ কখনোই এ ধরনের নির্যাতন বরদাশত করেনি। গণতন্ত্রকে হত্যা করা, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া, এটা অবশ্যই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের অধিকার ফিরিয়ে আনবে’।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি এখন গোটা বিশ্বে স্বীকৃত জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন এ ধরনের একটা নিষেধাজ্ঞা তখনই আসে, যখন একটা দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। জনগণকে নির্যাতন করা হয় এবং সরকার যখন জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে’।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের তুলনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চরিত্র একটাই। বাংলাদেশ সরকারের যে চরিত্র, মিয়ানমারের চরিত্রও একই। ওরা মিলিটারি জান্তা। আর এদের সঙ্গে কোন পার্থক্য নেই। এরা জনগণকে বন্দুকের নল দিয়েই দমিয়ে রাখছে’।

গুম-খুনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘তার বক্তব্য শুধু হাস্যকরই নয় খুবই দুঃখজনক। যাদের সন্তান-স্বামী গেছে, যাদের পরিজন গেছে, তারা সবাই জানে তাদেরকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। এই সরকার তো এখন পর্যন্ত এর কোন জবাব দেয়নি’।

তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে (সাংবাদিকদের) পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, কারা কারা ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে। নামগুলো প্রকাশ করুন। যারা গুম হয়েছে তাদের মধ্যে কারা গেছে। তাহলে আমরা মনে করবো যে, আপনারা জানেন যে ভূমধ্যসাগরে কাদেরকে আপনারা সলিল সমাধি করেছেন। আমি জানতে চাই’।

২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরপরই বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশ বলেছে নির্বাচনটা প্রতারণামূলক হয়েছে। জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। জনগণের অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে হয়নি, প্রত্যেকটা গণতান্ত্রিক দেশ বলেছে। সুতরাং বিদেশের সেই চাপতো থাকতেই হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপতো থাকবেই। এই সরকার তো গণতান্ত্রিক সরকার নয়।  একটা মিটিং করতে দেয় না। গতকাল যে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঘটনা ঘটেছে। আমাদের ছাত্রদল উত্তরের ছেলেরা সভা করতে চেয়েছিল সেটা করতে দেওয়া হয়নি। কোনো স্পেস দেওয়া হয়নি। নির্বাচন তো শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতায় রাখার জন্য করে। পাতানো নির্বাচন করে’।

এ সময় মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ নেতারা।   

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২২
এমএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।